২০৫০ সালে অর্ধেক মানুষ হবেন নিকটদৃষ্টিসম্পন্ন — রোহতো ফার্মাসিউটিক্যালের উদ্যোগ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:২৬, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
২০৫০ সালে অর্ধেক মানুষ হবেন নিকটদৃষ্টিসম্পন্ন। ছবি: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
বিশ্বব্যাপী চোখের স্বাস্থ্যের অবনতি এখন একটি নীরব বৈশ্বিক সংকট। সিএনএন-এর এক ব্র্যান্ডেড প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ—অর্থাৎ ৪০–৫০% জনসংখ্যা—মায়োপিয়া বা নিকটদৃষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হবে। শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, চিকিৎসাবিহীন দৃষ্টিশক্তি সমস্যার কারণে প্রতি বছর বিশ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৩ বিলিয়ন ডলার।
জাপানের পরিচিত প্রতিষ্ঠান রোহতো ফার্মাসিউটিক্যাল, যা ১৯০৯ সালে প্রথম আই ড্রপ চালুর মাধ্যমে তাদের যাত্রা শুরু করে, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চোখের যত্ন ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে তাদের চোখের যত্ন সংক্রান্ত পণ্যের ৮০ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের আই ড্রপ।
সিএনএন–এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—২০২০ সালে ১.১ বিলিয়ন মানুষ চিকিৎসাবিহীন দৃষ্টিশক্তি সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০৫০ সালের দিকে এই সংখ্যা ১.৮ বিলিয়ন ছাড়াবে।
ডিজিটাল স্ক্রিনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা চোখের ক্লান্তি, ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা ও ড্রাই আই সিনড্রোম বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডিজিটাল আই স্ট্রেন–এর শিকার। গত তিন দশকে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মায়োপিয়ার প্রকোপ তিনগুণ বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাদের দৃষ্টিশক্তি সমস্যার প্রভাব পড়ছে তাদের শিক্ষা, সামাজিক বিকাশ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর।
অন্যদিকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (AMD) ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশ্বজুড়ে এখন ২০ কোটি মানুষ AMD–তে আক্রান্ত, যা ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, চোখের রোগ ও কগনিটিভ ডিক্লাইন–এর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
রোহতো এখন শুধু আই ড্রপ নয়—চোখের সুস্থতা ধরে রাখতে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট হেলথ সলিউশন তৈরি করছে।
অসাকা এক্সপো ২০২৫-এ প্রদর্শিত তাদের প্রধান উদ্ভাবনগুলো—
✔ মিস্ট-টাইপ আই ড্রপ ডিসপেনসার
প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় আরও সহজ ও আরামদায়ক প্রয়োগ পদ্ধতি।
✔ ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টম-ব্লেন্ডেড আই ড্রপ
ব্যবহারকারীর চোখের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বিশেষ ফর্মুলা।
✔ ‘ফিউচার আইকেয়ার স্টেশন’—চোখের বয়স নির্ণয়ের প্রযুক্তি
এই স্টেশনে ভিজিটররা নিজের চোখের বয়স গণনা করতে পারতেন।
ব্যবহৃত প্রযুক্তি— স্বাস্থ্য রেকর্ড, চোখের ছবি বিশ্লেষণ, চোখের নড়াচড়া যাচাই করে ব্রেন কগনিশন স্কোর, চোখের ক্লান্তি ও রিফ্র্যাকশন ভ্যালু পরীক্ষণ
✔ স্ট্রেস ট্র্যাকিং ও ফোকাস বুস্টিং-এর জন্য VR ডিভাইস
শিশুদের অ্যাম্বলিওপিয়া (Lazy Eye) চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা
কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার কেন উমেমুরা বলেন— “আমরা চোখের ওপর গবেষণার নতুন বীজ বপন করছি। এক্সপোতে আমরা চাই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি মানুষের সামনে তুলে ধরতে।”
রোহতো গত এক দশক ধরে কোষভিত্তিক চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছে। ২০২৪ সালে তারা একটি পূর্ণাঙ্গ রিজেনারেটিভ মেডিসিন ল্যাব চালু করে, যা ভবিষ্যতের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
এক্সপোতে প্রদর্শিত হয়—
✔ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় AI–নিয়ন্ত্রিত সেল কালচারিং ডিভাইস
এর উদ্দেশ্য—জয়েন্ট পেইন চিকিৎসা, ত্বক ও চুলের পুনর্জন্ম, কোষ সংগ্রহ ও প্রয়োগের সহজ সমাধান।
উমেমুরার ভাষায়—
“ভাবুন, অফিসে যাওয়ার পথে ক্লিনিকে ঢুকে কোষ সংগ্রহ করলেন, আর ফেরার পথে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গেলেন—ভবিষ্যত পৃথিবী এমনই হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে চোখের স্বাস্থ্যর দুইটি মূল স্তম্ভ—
১) প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা, স্ক্রিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
২) প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইমেজিং সায়েন্স, VR থেরাপি এবং ডেটা-ড্রিভেন ডায়াগনস্টিক সিস্টেম।
রোহতো তাদের শতবর্ষের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নতুন গবেষণা যুক্ত করে একটি উন্নত ও সহজলভ্য ভবিষ্যৎ eye-care ecosystem গড়ে তুলছে।
