শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

| ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

অবিভক্ত হৃদয়ের গান

‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা’

মাইসারা জান্নাত

প্রকাশ: ১৩:০৫, ৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৩:১৪, ৯ নভেম্বর ২০২৫

‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা’

অখণ্ড ভারতের মানচিত্র। ছবি: উইকিপিডিয়া

কিছু গান-কবিতা সময়, সীমান্ত ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের অনুভূতিতে বেঁচে থাকে। ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা’ তেমনই এক দেশাত্মবোধক গান, যা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ভারতের প্রতিটি প্রজন্মের হৃদয়ে দেশপ্রেমের স্পন্দন জাগিয়ে আসছে। এই গানের স্রষ্টা কে জানেন? আল্লামা ইকবাল! অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার মতোই ব্যাপার!

আল্লামা ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত 

আজ আল্লামা ইকবালের জন্মদিন। তিনি জন্মেছিলেন অবিভক্ত ভারতে। অবিভক্ত ভারতকে ভালোবেসে ১৯০৪ সালে তিনি এমন হৃদয়গ্রাহী গান লিখেছেন, যখন ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট। পরবর্তীতে তিনিই ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে বিভক্ত করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনে ভূমিকা পালন করেছেন। 

১৯০৪ সালের ১৬ আগস্ট সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’ কবিতা। শিশুদের জন্য রচিত হলেও এতে ছিল বিস্তৃত মানবিক আবেদন, ছিল স্বাধীনতার স্বপ্নের আহ্বান। পরের বছর লাহোরের গভর্নমেন্ট কলেজের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইকবাল। সভাপতির ভাষণের পরিবর্তে তিনি যখন এই কবিতা গেয়ে শোনান, তখন সভার তরুণদের কণ্ঠে এক অভূতপূর্ব উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে কবিতাটি তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ বাঙ্গে দারায় তারানায়ে হিন্দ নামে স্থান পায়।

‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা/ হাম বুলবুলে হ্যায় ইস কি, ইয়ে গুলিস্তান হামারা।’ গানের প্রতিটি পঙক্তি যেন ভালোবাসায় সিক্ত এক ঐক্যের আহ্বান। ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খলে বন্দী অবিভক্ত ভারতে ইকবালের এই সঙ্গীত হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, যেখানে ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার বিভেদকে পেছনে ফেলে তিনি বলেছিলেন, এই ভূমি সবার, এই দেশ সবার।

মহাত্মা গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত

মহাত্মা গান্ধীও এই গানে গভীর প্রেরণা পেয়েছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে পুণের ইয়েরাওয়াড়া কারাগারে বন্দী অবস্থায় তিনি বারবার এই গান গেয়েছিলেন, যেন এটি হয়ে উঠেছিল তার আত্মপ্রেরণার মন্ত্র। স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীরা সভা-সমাবেশে, ছাত্ররা স্কুলে, সাধারণ মানুষ রাস্তায়, সর্বত্র এই গানই ছড়িয়ে দিয়েছিল এক অদম্য জাতীয় চেতনা।

পণ্ডিত রবি শঙ্করের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর। ছবি: সংগীত

১৯৫০-এর দশকে পণ্ডিত রবি শঙ্করের সেতার আর লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে যখন ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’ নতুন সুরে বেজে ওঠে, তখন এটি হয়ে ওঠে ভারতীয় জাতিসত্তার প্রতীক। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজে এই সঙ্গীত বাজানো হয় গর্বভরে, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এটি উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধার সঙ্গে। 

বাঁ থেকে ইন্দিরা গান্ধী, রাকেশ শর্মা ও রাভিশ মালহোত্রা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮৪ সালে যখন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মাকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মহাকাশ থেকে ভারত দেখতে কেমন?’, তখন তার উত্তর ছিল, ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’।

এই গান আজও ভারতের স্কুলে গাওয়া হয়, সেনা কুচকাওয়াজে বাজে এবং জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রতিধ্বনিত হয়। আর সেই সুর ও ভাষার সংমিশ্রণে বেঁচে থাকে অবিভক্ত ভারতের স্মৃতি।

সময়ের পরিক্রমায় ইকবাল পাকিস্তানের জাতীয় কবি হয়েছেন। কিন্তু তার লেখা এই গান ভারতের জাতীয় চেতনার অংশ হিসেবে আজও রয়ে গেছে। দুই দেশের সম্পর্কে যতই ভাটা পড়ুক, ইকবালের এই কবিতা প্রমাণ করে, সাহিত্য ও সঙ্গীতের সেতুবন্ধন ভাঙা যায় না। 

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের মিছিল
আসিফ আকবরের ‘ফুটবল বিদ্বেষী’ বক্তব্যের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মানববন্ধন
বিশ্বমঞ্চের লাইমলাইট চুরি করেছেন ঐশ্বরিয়া রাই একাই…
তারেক রহমান ক্ষমতায় এলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হবে
সীতাকুণ্ডে ঝোপের ভেতর পরিত্যক্ত অবস্থায় ৩ পাইপগানসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করল র‌্যাব-৭
আমরা ইউনূসের সনদ রিজেক্ট করেছি। আমরা জনতার সনদ তৈরি করব : সেলিম
রাজধানীতে নাশকতার প্রস্তুতি, নিষিদ্ধ আ.লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার
সরকার দরদ দেখিয়েছে, দায় দেখায়নি’ — নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমল, বিনিয়োগকারীদের মনে অনিশ্চয়তা
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন: ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধনের সময় ৪ সপ্তাহ
জেনেভা ক্যাম্পে গোপন কারখানা থেকে ৩৫ ককটেল উদ্ধার
কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে কয়েদির মৃত্যু
বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই নিশ্চিত করল পাকিস্তান
শয্যাশায়ী ধর্মেন্দ্রর ভিডিও ফাঁস তীব্র ক্ষোভে অমিতাভ–জয়া বচ্চন
হাসিনার রায় ঘোষণায় বিশৃঙ্খলা হলে দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর—আমির খসরু
রঙ্গনার ফুটেজ ফাঁস: ক্ষুব্ধ শাবনূর
‘তিন উপদেষ্টা সঠিক নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করছেন’—অপসারণের দাবিতে ডা. তাহের
ক্যালিফোর্নিয়ার নতুন ভোটিং মানচিত্রে ‘ডেমোক্র্যাট সুবিধা’ মামলা করল ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট
একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে ঢাবি শিক্ষক এরশাদ হালিম আদালতে চালান
সুদান সংকট নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ বাড়ছে, আল-ফাশির ঘটনায় তদন্তের দাবি তীব্র