গাজার স্কুলে দিনে ক্লাস, রাতে আশ্রয়
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:১৩, ৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:১৭, ৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: আল-জাজিরা
দুই বছর ভয়াবহ যুদ্ধের পর গাজায় ধীরে ধীরে জীবনের ছন্দ ফিরছে। এখানের ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও বিদ্যালয়গুলো ভস্মীভূত। তবুও পুরো দস্তুর শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। এখন গাজার স্কুলগুলোতে দিনে ক্লাস হচ্ছে আর রাতে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ছবি: ইউএনআরডব্লিউএ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধ বিরতির চার সপ্তাহ পার হতে না হতেই সংস্থাটি গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানের স্কুলগুলো ক্রমান্বয়ে চালু করছে। যদিও এখনো ইসরায়েলি হামলা চলছে এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছাতেও নানা বাধা রয়ে গেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউএনআরডব্লিউএর তিন লাখ শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, তাদের মোট বিদ্যালয়ের ৯৭ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। যে শ্রেণিকক্ষগুলো একসময় ছিল পাঠদানের কেন্দ্র, সেগুলো এখন শত শত বাস্তুচ্যুত পরিবারের আশ্রয়স্থল।

ছবি: আল-জাজিরা
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের স্কুলগুলোর একেকটি শ্রেণিকক্ষ এখন আশ্রয়স্থল ও শিক্ষার দ্বৈত ভূমিকা পালন করছে। একই ঘরে একদিকে শিশুদের পাঠচর্চা, অন্যদিকে পরিবারের বসবাস।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইনাম আল-মাঘারি বলেন, ‘দুই বছর ধরে স্কুলে যেতে পারিনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি শেষ করতে পারিনি। এখন মনে হয় কিছুই জানি না। আজ বেঞ্চের বদলে ম্যাট্রেস নিয়ে বসে পড়তে হচ্ছে।’
ইউএনআরডব্লিউএর যোগাযোগ বিভাগের প্রধান আনাস হামদান বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র-স্কুলে অস্থায়ী নিরাপদ শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছি, যেখানে প্রায় ৬২ হাজার শিক্ষার্থী সরাসরি ক্লাস করছে। পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে তিন লাখ শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত রাখার চেষ্টা চলছে।’
গাজার শিশুদের মানসিক অবস্থাও ভয়াবহ। ইউনিসেফের তথ্যে বলা হয়েছে, এখানকার ৮০ শতাংশেরও বেশি শিশু মারাত্মক মানসিক অসুখে ভুগছে। সংস্থাটির হিসেবে, এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি শিশু নিহত ও আহত হয়েছে।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক এডুয়ার বিগবেদার বলেন, ‘গাজার প্রায় এক মিলিয়ন শিশু প্রতিদিন মৃত্যুভয়ের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হয়ে উঠেছে শিশুদের জন্য। তাদের হৃদয়ে এখন ভয়, ক্ষতি ও শোকের গভীর দাগ।’
গাজার ধ্বংসস্তূপের মাঝেও শিক্ষার আলো জ্বালাতে মরিয়া এই মানুষগুলো প্রমাণ করছেন, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শুধু খাদ্য ও আশ্রয় নয়, বরং শিক্ষাও অপরিহার্য।
সূত্র: আল-জাজিরা
