৯ দিনেও নেই পর্যটক
হতাশ সেন্টমার্টিনের পর্যটননির্ভর মানুষ
শহীদুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৮:৩৬, ৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০০:২৮, ১০ নভেম্বর ২০২৫
পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র সেন্টমার্টিন দ্বীপ / ফাইল ছবি
পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হওয়ার কথা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র—নভেম্বরের প্রথম নয় দিনেও একটিও পর্যটকবাহী জাহাজ পৌঁছায়নি দ্বীপে। ফলে সেন্টমার্টিনে নেমে এসেছে নীরবতা, মুখ থুবড়ে পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতি।
রবিবার (৯ নভেম্বর) পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ ছেড়ে যায়নি। অথচ প্রতিবছর এই সময়টিতে হাজারো পর্যটকে মুখর থাকে প্রবাল দ্বীপটি।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, “নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি না থাকায় পর্যটকদের আগ্রহ একেবারেই নেই। টিকিট বিক্রি হচ্ছে না, ফলে কোনো জাহাজ চালানো সম্ভব হয়নি। এক ট্রিপে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়—পর্যটক না থাকলে এত লোকসান নেওয়া যায় না।”
তিনি আরও বলেন, টেকনাফ বা ইনানী থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি পেলে যাতায়াত সহজ হতো এবং পর্যটকও বাড়ত। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া ঘাট থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে হয়, যা অনেক পর্যটকের কাছে কষ্টসাধ্য ও অনুৎসাহজনক হয়ে উঠেছে। এ কারণে অনেকেই ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন, যখন দ্বীপে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে।
জীবিকা সংকটে দ্বীপবাসী
সেন্টমার্টিনের অর্থনীতি মূলত পর্যটন ও মাছধরা নির্ভর। পর্যটক না থাকায় হোটেল–রিসোর্ট মালিক, শ্রমিক, রিকশাচালক, ট্রলার মালিক, শুঁটকি ব্যবসায়ীসহ প্রায় সব পেশার মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
দ্বীপের শ্রমিক লিয়াকত আলী বলেন, “প্রতিবছর এই সময়ে কাজের চাপ থাকে, কিন্তু এবার আয়–রোজগার বন্ধ। অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন।”
শুঁটকি ব্যবসায়ী আলী হায়দার বলেন, “পর্যটক না আসায় দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে কিছুটা পরিবর্তন আশা করছি।”
সি প্রবাল রিসোর্টের পরিচালক ও হোটেল–রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম জিহাদি বলেন, “দ্বীপের প্রায় আড়াই শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁ এখন খালি। নভেম্বর থেকে পর্যটক আসার কথা ছিল, কিন্তু জাহাজ না চলায় কেউ আসতে পারেনি। এতে উদ্যোক্তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”
তিনি জানান, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দিনে দুই হাজার পর্যটক আসার অনুমতি থাকবে। তবে বাস্তবে কতজন আসবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, “দ্বীপের ৯৫ শতাংশ মানুষ পর্যটন ও মাছ শিকার নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করেন। নভেম্বর মাসে রাতে থাকার অনুমতি না থাকায় কেউ আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, “পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ১২ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে। ডিসেম্বর থেকে নিয়ম মেনে পর্যটকরা দ্বীপে যেতে পারবেন বলে আশা করছি।”
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত থাকে পর্যটন মৌসুম। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
২০২৪ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপে জাহাজ চলাচলের অনুমতির ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ যুক্ত হয়—নভেম্বর মাসে শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি থাকলেও রাতে দ্বীপে অবস্থান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ফলে এবার মৌসুমের শুরুতেই পর্যটক হঠাৎ কমে গেছে।
দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দার অধিকাংশই পর্যটন ও মৎস্য আহরণের সঙ্গে জড়িত। তাদের মতে, পর্যটক না এলে স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। তাই স্থানীয় উদ্যোক্তারা ডিসেম্বর থেকে রাত্রিযাপন পুনরায় চালুর আশায় দিন গুনছেন।
