ইউনূসের সনদ রিজেক্ট করেছি, জনতার সনদ তৈরি করব: সেলিম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:৫৫, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০১:২৮, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ছবি: সমাজকাল
বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে এই আহ্বান জানান দলটির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদসহ বিভিন্ন বাম দল ও সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা ২টার দিকে উদীচীর জাতীয় সংগীত ও গণসংগীত পরিবেশনের মধ্যে সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় উদ্যানের বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন সারা দেশ থেকে আগত নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশে সেলিম বলেন, ‘বুর্জোয়া দলগুলোর বাইরে আমরা একটা জোট গড়ে তুলব। নৌকা, পাল্লা, ধানের শীষ, লাঙ্গল—যাদের আমরা স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় দেখেছি—তাদের ছাড়া আমরা একটা যুক্তফ্রন্ট গড়ে তুলব।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে সেলিম বলেন, ‘নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু বলে দিলেন, সেই দিনই গণভোট করতে হবে। যে সনদ উনি (প্রধান উপদেষ্টা) ঘোষণা দিলেন, সেটা ভুয়া সনদ। কারণ, আমাদের সঙ্গে কথা বললেন একরকম আর তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা ভুয়া, বিকৃত। তাই এটা এখন মানুষ আর বিশ্বাস করে না। আমরা ইউনূসের সনদ রিজেক্ট করেছি। আমরা জনতার সনদ তৈরি করব।’
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতোই আরেকটা নব সংস্করণ আমাদের দেশের সমস্যার সমাধান করবে না। যে ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, সেই ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে নতুন ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে।’
সমাবেশে সামাজিক বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানান ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই যুক্তফ্রন্ট ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট হবে না। এই যুক্তফ্রন্ট হবে বিপ্লবীদের যুক্তফ্রন্ট। সামাজিক বিপ্লবীদের বৃহৎ ঐক্য গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে কর্তব্য। বাংলাদেশের এখন যে দুর্গতি, তা কেউ একা মোকাবিলা করতে পারবে না। তাই মানুষের ঐক্য দরকার। বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার সামাজিক বিপ্লবীদের ঐক্য।
সিপিবির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদে সই করি নাই। সেই ফাঁদে আমরা পা দিই নাই। পা দিয়েছে বিএনপি। সংবিধান বাতিল করে দিতে হবে, চার মূলনীতি বাতিল করতে হবে—এগুলো ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ছিল না। ২৪-এর আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র ও বৈষম্যবিরোধিতা। এসব অ্যাজেন্ডা এনেছে এনসিপি, ঐকমত্য কমিশন আর জামায়াতে ইসলামী।’
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণার দাবি জানান সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন।
নির্বাচনে জামানতের অর্থ কমানো ও প্রার্থীদের সমতা নিশ্চিত করার দাবিতে ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এবং জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
এ ছাড়া লালদিয়া টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তরের চুক্তি স্বাক্ষর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, ২৮ নভেম্বর ঢাকায় নারীদের রাজনৈতিক কনভেনশন, ২৯ নভেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশ জাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোর উদ্যোগে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন সাজ্জাদ জহির চন্দন।
