৪৩ শিক্ষার্থীর ৭১ শিল্পকর্ম নিয়ে ঢাবির ভাস্কর্য বিভাগে প্রদর্শনী
তাসকিনা ইয়াসমিন
প্রকাশ: ০০:৩৩, ৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৪৫, ৭ নভেম্বর ২০২৫
৪৩ শিক্ষার্থীর ৭১টি শিল্পকর্ম নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জয়নুল গ্যালারিতে চলছে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী-২০২৪। ছবি: তাসকিনা ইয়াসমিন
সুরাইয়া আফরিনের মিশ্র মাধ্যমে তৈরি শিল্পকর্ম শরণার্থী, সাদিয়া আলম দিয়ার সুতা, ক্যানভাস ও মাটি মাধ্যমের শিল্পকর্ম চোখ, তাসনিয়া তাহসিন ইথারের প্লাস্টার মাধ্যমের শিল্পকর্ম শামুক। এই তিনজনসহ ৪৩ জন শিক্ষার্থীর ৭১টি শিল্পকর্ম নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জয়নুল গ্যালারিতে চলছে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী-২০২৪। চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগ আয়োজিত প্রদর্শনীটি ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খানকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাবির ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবির বলেন, “বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ সহ-শিক্ষা কার্যক্রম। প্রদর্শনীর জন্য মনোনীত ও পুরস্কৃত শিল্পকর্ম তাদের ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পোর্টফোলিওর অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।”
ঢাবির ভাস্কর্য বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী-২০২৪ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. নাসিমা হক মিতু। তিনি বলেন, বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম নিয়ে ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী’ শিক্ষা কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীদের এক বছরের শ্রেণির কাজ থেকে বাছাইকৃত শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের শিল্পকর্ম দর্শকের সামনে উপস্থাপনের এবং সমালোচনার অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তেমনি শিক্ষকরাও নিজেদের চলমান কারিকুলাম ও শিখন-পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনার সুযোগ পায়। বিভাগের চলমান কারিকুলামে শুধু দক্ষতা অর্জন নয়, শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং নানা মাধ্যম, প্রক্রিয়া ও উপকরণ নিয়ে নিরীক্ষাকে উৎসাহিত করা হয়। এই প্রদর্শনীর কাজগুলোতে তার প্রতিফলন পড়েছে। 
শিল্পকর্মগুলো নিঃসন্দেহে দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর। তাদের একেকজনের কাজ এত আকর্ষণীয় যে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। কেউ বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই যে এগুলো শিক্ষার্থীদের কাঁচা হাতের কাজ। যেহেতু ভাস্কর নভেরা আহমেদের বিভাগ এটি, বেশকিছু শিল্পকর্মের মধ্যে যেন তার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়।
প্রদর্শনীতে নৌ-বিশ্রাম, লেড়ু, কাকতাড়ুয়া, উপবিষ্ট দেবতা, শুঁয়োপোকা, ভাঁজ, নারী, আত্মজা, শৈশব, টানা, শামুক, জুতা, অস্বস্তি, কাঁকড়া, প্রতিবিম্ব মৌলিক নকশাসহ বিভিন্ন শিরোনামের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। প্রায় সব মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কাজ করায় প্রদর্শনীটি যেন ভাস্কর্য বিভাগের স্বল্পকালীন একটি ছোট্ট জাদুঘরের প্রতিচ্ছবিতে রূপ নিয়েছে। যেখানে আছে তাদের সব মাধ্যমের কাজগুলো।
শিল্পকর্মগুলো তৈরিতে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে লোহা, মাটি, কংক্রিট, এক্সরে ফিল্ম, ধাতু, রড, ইস্পাত, কাঠ, পাটের সুতলি, রেজিন, ফাইবার, প্লাস্টার, কাগজ, তার, ফটোগ্রাফি, চারকোল, ডিজিটাল, ক্যানভাস, রং, পেন্সিল ও মিশ্র মাধ্যম ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে ৬টি কাজ পুরস্কৃত হয়েছে। ‘নিরীক্ষামূলক শ্রেষ্ঠ পুরস্কার’ পেয়েছেন স্নাতকোত্তর প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী সুপ্রিয় কুমার ঘোষ। ‘মাধ্যম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার’ পেয়েছেন স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুমিত রায়। ‘অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান স্মৃতি পুরস্কার’ পেয়েছেন স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৃধা মো. রাইয়ান আযীম। ‘ভাস্কর নভেরা আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার’ পেয়েছে স্নাতকোত্তর প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী অলি মিয়া। ‘অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক স্মৃতি পুরস্কার’ পেয়েছেন স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চিন্ময় ঘোষ। ‘শিল্পী আনোয়ার জাহান স্মৃতি পুরস্কার’ পেয়েছেন স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যয় সাহা।
প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করা হয়েছে ২ নভেম্বর, রবিবার। এটি শেষ হবে আগামীকাল ৮ নভেম্বর, শনিবার। এটি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কবি।
