নাসির আহমেদের গুচ্ছকবিতা
প্রকাশ: ২০:২৮, ৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৩১, ১০ নভেম্বর ২০২৫
নাসির আহমেদ
স্তম্ভিত দাঁড়িয়ে আছো কেন
তুমি পথ হারিয়ে হঠাৎ
এই অচেনা সমুদ্রতীরে
স্তম্ভিত দাঁড়িয়ে আছো!
যেন কোনো জনহীন দ্বীপে!
অচেনা আতঙ্ক চোখে তুমি কেন সবিস্ময়ে তাকিয়ে রয়েছো
দূর দিগন্তের পরও যেন ওই সমুদ্রের অথই ঠিকানা!
এমন ছিল না কথা, নির্জনতা ছবি তুলে রাখলে সৌন্দর্য
কিন্তু এরকম জনহীনতায় মানুষের জীবন স্থবির।
সমস্ত সৌন্দর্যবোধ মুছে যায় নৈঃসঙ্গের প্রবল থাবায়!
কে দেখাবে পথ বলো কোনো পান্থসখা নেই আর।
তুমিই তোমার সখা, ঈশ্বরের অনুকম্পা কই!
যেন কোন হিমযুগ থেকে তুমি উদ্ধারের ঠাণ্ডা প্রতীক্ষায়
দাঁড়িয়ে রয়েছো এই জনহীন দ্বীপের উত্তাল আর্ত বুকে!
তোমার উদ্ধার নেই, কোনো জাহাজেরও গল্প নেই।
অশান্ত পৃথিবী আর কোনদিন শান্তিকে পাবে কি!
যদি পেত তা হলেই বলা যেত উদ্ধারের আশ্চর্য কাহিনী কোনো,
হঠাৎ জাহাজ! অথবা আকাশযান এসে গেছে ঈশ্বরের আশ্চর্য কৃপায়!
তোমার উদ্ধার নেই কোনো অলৌকিকে কোনদিন
দাঁড়িয়ে না থেকে তুমি বরং প্রস্তুতি নাও,
মাথার ওপরে থাক চন্দ্র ও সূর্যের আবর্তন
তুমি যাত্রা শুরু করো বিপদ-সংকুলে দুঃসাহসে।
ঘুমন্ত পাহাড় আর ঈশ্বরে তফাৎ নেই আজ
মানুষ তুমিই শক্তি, সত্তার সূর্যেই তুমি রৌদ্র-জ্যোৎস্না জ্বালো।
ক্ষমা করো মা বসুধা
জননী তোমার সহিষ্ণু ক্লেষ-- কৃচ্ছ্র
সাধনার পাশে পুরুষ সত্তা তুচ্ছ
জেনেও তোমাকে পারিনি তো দিতে মহিমা
ব্যর্থ আমার অক্ষমতার জানি না তো তার কী সীমা!
বিনিদ্র তুমি কাটিয়ে দিয়েছো জীবনের কত রাত্রি!
সংসারে তুমি নিত্য শ্রমিক দুর্গম পথযাত্রী।
ঝড়ে ঝঞ্জায় শত সংকটে মাথার উপরে ছত্র
মাতৃত্বের এমনই সেবিকা সবই করো নিঃশর্ত!
নিজে অনাহারি থেকেও সবার তৃপ্তিতে পরিতৃপ্ত!
মুরগিছানার ডানার আদলে আগলে রেখেছ সাহসিনী তুমি দৃপ্ত!
তুমি যেন সেই মহাকাশ যার সীমা নেই চাঁদ-সূর্যে
তোমার শক্তি ইতিহাস জানে অসূর বিনাশী তুর্যে!
অথচ এমনই হতভাগা আমি, দেখিনি সে ঐশ্বর্য!
ক্ষমা করো ত্যাগী মা বসুধা! এই সন্তান পরিবর্জ্য।
মাতৃভাষা আর মাতৃমুখ
যখন মায়ের মুখ মনে পড়ে অকস্মাৎ
প্লাবিত দুচোখ
ফিরে আসে স্মৃতিময় শৈশব-কৈশোর: পাঠশালার ঘন্টাধ্বনি,
স্নায়ুতে বিরতিহীন নামতার কোরাস,
কালো স্লেটে শুভ্র বর্ণমালাজুড়ে মাতৃডাক
শুনি: আয়, আয়!
ভাবছি মায়ের কথা, শৈশবের প্রিয় বর্ণমালা—
মাকে মৃত্যু নিয়ে গেছে
সেই প্রিয় বর্ণমালা এবং ভাষার বুকে নেমেছে
ভয়াল অন্ধকার!
এই অন্ধকারে আমি আলোর প্রার্থনারত প্রভু
নির্মল শৈশব আর কৈশোরের বাংলা গান
এবং দাদীর মুখে শোনা
রূপকথার জন্য আমি প্রতীক্ষিত আজ।
ফিরে আসুক আবার সেই মাতৃভাষার সৌরভ
আশীর্বাদে তোলা মা'র কোমল হাতের দ্যুতিটুকু
ঝরুক মাথায়।
সগৌরবে ফিরুক বাঙালি নিজ ঘরে
রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ঐতিহ্যে উজ্জ্বল সেই সোনার বাংলায়।
