শিল্পকলায় আবু রাসেল রনির প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩:২৪, ৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:২৮, ৮ নভেম্বর ২০২৫
আলোকচিত্রশিল্পী আবু রাসেল রনির প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: আয়োজক কর্তৃপক্ষ
তরুণ আলোকচিত্রশিল্পী আবু রাসেল রনির প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৫নং গ্যালারিতে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়।
সবার জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনী চলবে ৮ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত। সাত দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রীর তোলা ৫০টি নির্বাচিত আলোকচিত্র স্থান পেয়েছ। এতে ৫০টি ভিন্ন ভিন্ন গল্পের দেখা পাবেন দর্শকরা। এ প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
শিল্পকলা একাডেমি জানিয়েছে, দেশের তরুণ শিল্পীদের সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডের প্রচার, প্রসার, বিকাশ ও চর্চাকে আরও গতিশীল করার লক্ষে একাডেমি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কর্মশালা আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আলোকচিত্রশিল্পী আবু রাসেল রনির প্রথম একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বরেণ্য কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (রেজাউদ্দিন স্টালিন)।
উদ্বোধনী আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন ও সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক চিত্রশিল্পী আব্দুল হালিম চঞ্চল।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, ‘আলোকচিত্রের ইতিহাস প্রায় দুই শতাব্দী পুরনো। শুরুতে এটি ছিল কেবলই তথ্য সংরক্ষণের একটি উপায়, কিন্তু ধীরে ধীরে ফটোগ্রাফি নিজেই রূপ নেয় এক স্বতন্ত্র শিল্পরূপে; যেখানে বাস্তবতা, অনুভূতি আর সৃষ্টিশীলতা মিলে তৈরি হয় জীবনের এক কাব্যিক প্রতিচ্ছবি। শিল্পী আবু রাসেল রনির প্রতিটি ছবির মধ্যে নতুন চিন্তার খোরাক আছে, প্রতিটি চিন্তাশীল মানুষ শিল্পের জন্য চিন্তার খোরাক পাবে। যখন কোন আলোকচিত্রী ছবির মাধ্যমে মানুষের মনে চিন্তা ও ভাবনার খোরাক জোগান দিতে পারেন তখনই তিনি শিল্পী হয়ে ওঠেন। আমরা একাডেমির মাধ্যমে দেশের প্রতিভাবান শিল্পীদের সুযোগ করে দিতে চাই। কবিতা যেমন তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভাব প্রকাশ করে রনিও তার ছবির মাধ্যমে সেই মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এজন্য তাকে অভিনন্দন জানাই।’
বরেণ্য আলোকচিত্রীশিল্পী নাসির আলী মামুন বলেন, ‘যাই হোক, রনির প্রদর্শনীতে আজকে এসেছি। রনির অন্তরের যে চোখগুলো আছে সেগুলো প্রসারিত। তার ছবিগুলো দেখেছি। একটি ছবিতে পায়ের মধ্যে যে মানচিত্র সে যে ধরতে পেরেছে, এটা দেখে আমি অভিভূত। রনিকে আমি অভিনন্দন জানাই। শিল্পকলা একাডেমিতে অবিলম্বে আলোকচিত্র সংগ্রহের জন্য একটি রুম চাই। আমরা দেশের ৫৪ বছরেও কোন ফটোগ্রাফির সংগ্রহশালা করতে পারিনি। দেশের গুণীদের অনীহার মধ্য দিয়ে আমাদের ফটোগ্রাফি যাচ্ছে। আমাদের আসলে দরকার এমন প্রতিষ্ঠান যে প্রতিষ্ঠান শিক্ষা দেবে এবং মান উন্নয়ন করবে। এখন পর্যন্ত ফটোগ্রাফি থেকে কেউ রাষ্ট্রীয় পদক পায়নি। বাংলাদেশের প্রয়াত কোন ফটোগ্রাফারকে দিয়ে যেন এ সম্মান জানানো হয়।’
শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক চিত্রশিল্পী আব্দুল হালিম চঞ্চল বলেন, ‘৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিবর্তন এসেছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। শিল্পসংস্কৃতির সকলেই এর সুফল পাবে।’
আলোকচিত্রশিল্পী আবু রাসেল রনি বলেন, ‘আমি একজন লাইফস্টাইল ফটোগ্রাফার। আমার ফটোগ্রাফি যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে, কুষ্টিয়ার এক বিকেলের আড্ডা থেকে। আমার কাছে ফটোগ্রাফি কেবল কোনো অপটিক্যাল যন্ত্রের মাধ্যমে স্মৃতি ধারণের প্রক্রিয়া নয়; বরং এটি ভাবনার এক বিস্তার, যা আমাকে বারবার প্রশ্ন করতে শেখায় কী, কেন, কীভাবে?’
সিঙ্গেল ল্যান্স ফটোগ্রাফার এ আলোকচিত্রশিল্পীর ছবি আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দ্য ডেইলি স্টার’ আয়োজিত ‘সেলিব্রেটিং লাইফ, ২০১৮’-এর গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড এবং ‘আইএবি গোল্ডেন জুবলি সেলিব্রেশন’-এ গ্র্যান্ড প্রাইজ অর্জন।
শিল্পকলা একাডেমি আশা করছে, এই প্রদর্শনী তরুণ প্রজন্মের ফটোগ্রাফার ও শিল্পানুরাগীদের সৃষ্টিশীলতার নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে অনুপ্রাণিত করবে।
