রিওতে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান মৃত বেড়ে ১৩২
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:৪৭, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহরে পুলিশের পরিচালিত এক অভূতপূর্ব মাদকবিরোধী অভিযানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ জনে। স্থানীয় সরকারি আইনি কার্যালয় (পাবলিক ডিফেন্ডার অফিস) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শহরের উত্তরাঞ্চলের আলেমাও ও পেনহা এলাকার বস্তিগুলোতে (ফ্যাভেলা) এই অভিযানকে রিওর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী পুলিশি অভিযান হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
রিও রাজ্যের গভর্নর ক্লাউডিও কাস্ত্রো জানিয়েছেন, ফরেনসিক তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। সরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৮ জন, তবে বাস্তবে তা অনেক বেশি হতে পারে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “সংঘর্ষ কোনো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হয়নি, সবই ঘটেছে জঙ্গলে। তাই আমি বিশ্বাস করি না যে, সংঘর্ষের সময় কেউ সেখানে শুধু ঘুরতে গিয়েছিল।”
এই মন্তব্যের পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভর্নরের অবস্থানকে কঠোর ও অমানবিক বলে সমালোচনা করছে।
অভিযান নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা।
বিচারমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট লুলা “বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ” যে ফেডারেল সরকারকে আগে থেকে এই অভিযান সম্পর্কে জানানো হয়নি।
এরই মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এই অভিযানে “চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন” হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
রিওর আলেমাও ও পেনহা বস্তিগুলো ‘রেড কমান্ড’ নামে পরিচিত এক শক্তিশালী গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। পুলিশের দাবি, অভিযানের সময় গ্যাং সদস্যরা ড্রোন ব্যবহার করে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছিল। এতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনঘন গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ব্যারিকেড তৈরি করতে বাসে আগুন দেওয়া হয়, এবং বহু পরিবার ঘরবন্দি অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটায়। অসংখ্য লাশ বস্তির গলিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে, মৃতদের আত্মীয়রা কাঁদতে কাঁদতে লাশ উদ্ধার করছিলেন।
ব্রাজিলের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ ধরনের অভিযান দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সামিল। তারা বলছে, অপরাধ দমন নয়, বরং দরিদ্র ফ্যাভেলা জনগণের ওপর “প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা” চালানো হচ্ছে।
রিওর এই অভিযানে নিহতদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছে। লুলা সরকারের জন্য এই অভিযান এখন এক বড় রাজনৈতিক ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
