লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবি: বাংলাদেশিসহ ৯০ জন উদ্ধার, নিহত ১৮ অভিবাসনপ্রত্যাশী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৫৮, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে আবারও ভয়াবহ নৌকাডুবি ঘটেছে লিবিয়ার উপকূলে। এতে অন্তত ১৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন এবং বাংলাদেশিসহ ৯০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে উপকূলীয় শহর সাবরাথার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে লিবিয়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সোমবার রাতে নৌকাটি ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই উদ্ধার অভিযান শুরু হয় এবং মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলো সুরমান বন্দরের কাছাকাছি উপকূল থেকে তোলা হয়।
রেড ক্রিসেন্ট প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবীরা মরদেহগুলো সাদা ব্যাগে মুড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তোলেন। জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ঘটনাস্থলেই।
১৮ বাংলাদেশি বেঁচে ফিরেছেন
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, লিবিয়ার আল জাওইয়া থেকে যাত্রা করা কাঠের নৌকাটি সমুদ্রে ভাসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উচ্চ ঢেউয়ে উল্টে যায়। এ ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়। জীবিত উদ্ধার হওয়া ৬৪ জনের মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি, ৩১ জন সুদানি (যাদের মধ্যে একজন নারী ও একটি শিশু), ১২ জন পাকিস্তানি এবং ৩ জন সোমালি নাগরিক আছেন।
তবে মৃতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি রয়েছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। আইওএম জানিয়েছে, নিহতদের জাতীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
প্রাণঘাতী ভূমধ্যসাগরীয় পথ
আইওএমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী এই মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুটে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু লিবিয়ার উপকূলে ৫২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এই নৌকাডুবি আবারও প্রমাণ করল—নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনের খোঁজে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামা মানুষেরা কতটা মরণফাঁদে পড়ছেন।
আইওএম আরও জানায়, উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের চিকিৎসা, মানসিক সহায়তা ও সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে সংস্থাটি। পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরে প্রাণহানি ঠেকাতে নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন পথ প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
লিবিয়ায় মানবপাচারের ভয়াবহতা
দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই লিবিয়া অস্থিতিশীল। দেশটি বর্তমানে ত্রিপোলি ও বেনগাজি—দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের অধীনে বিভক্ত, আর সেই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারী চক্রগুলো। সংঘাত, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে পালিয়ে আসা আফ্রিকা ও এশিয়ার হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়ায় জড়ো হন ইউরোপে পৌঁছানোর আশায়।
কিন্তু সেই আশার যাত্রা প্রায়ই পরিণত হচ্ছে মৃত্যুর যাত্রায়।
