বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

| ১৫ কার্তিক ১৪৩২

ইউক্রেনে দুই হাজার সৈন্য পাঠাবে ফ্রান্স, দাবি এসভিআরের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০:৩০, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:০১, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

ইউক্রেনে দুই হাজার সৈন্য পাঠাবে ফ্রান্স, দাবি এসভিআরের

ইউক্রেনকে যুদ্ধে সহায়তা করতে ফ্রান্স দুই হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি জানিয়েছে রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআর।

এক বিবৃতিতে এসভিআর জানায়, এই বাহিনীর মূল অংশ গঠিত হবে ফরাসি ফরেন লেজিয়নের ঝটিকা সৈন্যদের দিয়ে, যাদের অধিকাংশই লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। 

বর্তমানে এসব সৈন্য পোল্যান্ডের ইউক্রেন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে। সেখানে তারা তীব্র যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, পাশাপাশি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম গ্রহণ করছে। খুব শিগগিরই তাদের ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।

এসভিআর-এর আরও দাবি, ফ্রান্সের হাসপাতালগুলো দ্রুত নতুন শয্যা সংযোজনের মাধ্যমে চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, যাতে আহত সেনাদের চিকিৎসা দেওয়া যায়। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের মাঠ পর্যায়ের বিশেষ চিকিৎসা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এসভিআর বলছে, এই তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে প্যারিস দাবি করবে, ইউক্রেনে কেবল অল্পসংখ্যক প্রশিক্ষক পাঠানো হয়েছে, যারা ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

বিবৃতিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে লক্ষ্য করে কটাক্ষ করে বলা হয়, ‘ম্যাক্রোঁ নাকি নেপোলিয়নের গৌরব অর্জনের স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু ইতিহাস সম্পর্কে তার জ্ঞান গভীর নয়। তিনি নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযানের পরিণতি-সংক্রান্ত অধ্যায় পড়েননি এবং সুইডেনের রাজা চার্লস দ্বাদশের ব্যর্থ রাশিয়া অভিযানের ঘটনাও ভুলে গেছেন!’

এখানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইউক্রেন নীতিকে ইতিহাসের আলোকে সমালোচনা করা হয়েছে।

তারা বলছে, ম্যাক্রোঁ নাকি নেপোলিয়নের মতো গৌরব অর্জনের স্বপ্ন দেখেন। অর্থাৎ নিজেকে এক শক্তিশালী ইউরোপীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু রুশ পক্ষের মতে, তিনি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না।

নেপোলিয়ন ১৮১২ সালে রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন। বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি মস্কো পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন, কিন্তু কঠিন শীত, রুশদের গেরিলা কৌশল ও রসদ সংকটে তার বাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়। ইতিহাসে এই অভিযান ইউরোপীয় সেনাশক্তির জন্য এক ভয়াবহ পরাজয় হিসেবে বিবেচিত।

একইভাবে সুইডেনের রাজা চার্লস দ্বাদশও ১৮ শতকে রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন ইউক্রেনের এক স্থানীয় নেতা ইভান মাজেপার সহযোগিতায়। কিন্তু রুশ বাহিনীর হাতে তিনি পরাজিত হন। সেটিও রাশিয়ায় ইউরোপীয় শক্তির ব্যর্থ অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

এসভিআর-এর বক্তব্য হলো, ম্যাক্রোঁ এখন ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিপক্ষে যেভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তা ইতিহাসের সেই ব্যর্থ অভিযানের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। অর্থাৎ ইউরোপের কোনো নেতা রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিকভাবে সফল হয়নি, ম্যাক্রোঁও হবেন না।

সব মিলিয়ে, এটি রাজনৈতিক কূটকৌশলের পাশাপাশি ইতিহাসের উদাহরণ টেনে ফরাসি নেতৃত্বকে ব্যঙ্গ করার প্রচেষ্টা।

রাশিয়ার ঐতিহাসিক ভাসিলি ক্লুচেভস্কির উদ্ধৃতি দিয়ে এসভিআর বলে, ‘ইতিহাস কোনো শিক্ষা দেয় না, এটি কেবল অজ্ঞতাকে শাস্তি দেয়।’

এদিকে ফ্রান্স এখনো রাশিয়ার এ দাবির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন