গুম কমিশন গঠন হচ্ছে না
দায়িত্ব পালন করবে মানবাধিকার কমিশন : আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:১৮, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:১২, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
গুম তদন্তে আলাদা কমিশন না করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকেই পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। একই বৈঠকে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, সরকার আর আলাদা করে ‘গুম কমিশন’ গঠন করবে না। মানবাধিকার কমিশনই গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করবে—এই বিধান নতুন অধ্যাদেশে সংযোজিত হয়েছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আগের মানবাধিকার কমিশন ছিল দন্তহীন। নিয়োগ প্রক্রিয়া ও এখতিয়ারে বড় ঘাটতি ছিল। এবার আমরা আইনটিকে শক্তিশালী করেছি যাতে কমিশন সত্যিকারের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারে।”
তিনি জানান, নতুন অধ্যাদেশে মানবাধিকারের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করে বাংলাদেশ অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি ও প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অধিকারের আওতাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের বাইরেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে ঘোষিত অধিকারের প্রয়োগে কমিশন হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
নতুন আইনে মানবাধিকার কমিশনে থাকবেন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য। পূর্ব প্রস্তাবিত সাত সদস্যের পরিবর্তে পাঁচ সদস্যের কাঠামো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট বাছাই কমিটি থাকবে, যা সাক্ষাৎকার নিয়ে সুপারিশ করবে।
গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাম আহ্বান এবং সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে—যা বিচারপতি নিয়োগের আদলে তৈরি।
আইন উপদেষ্টা জানান, পূর্ববর্তী আইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের সীমাবদ্ধতা ছিল। নতুন অধ্যাদেশে সেই ঘাটতি দূর করা হয়েছে। এখন থেকে “রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশন তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে,”
বলেন আসিফ নজরুল।
তিনি আরও জানান, গুম প্রতিরোধ আইন এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে আগামী সপ্তাহে তা অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হলো। সরকারের মতে, আলাদা গুম কমিশন না করেও বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করাই হবে টেকসই ও কার্যকর সমাধান।
