৫৬ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন খুলনার শাম্মী আক্তার
খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫:৩৭, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
অদম্য ইচ্ছাশক্তি, পরিবারে অনুপ্রেরণা ও নিজের মনের জোরেই ৫৬ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করেছেন খুলনার শাম্মী আক্তার। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি জিপিএ ৩.১৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
১৯৮৮ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন শাম্মী আক্তার। সংসার, সন্তান ও পারিবারিক দায়িত্বে তখনই থেমে যায় তার পড়াশোনা। কিন্তু থেমে থাকেননি তিনি—সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করার পাশাপাশি নিজের শিক্ষার স্বপ্নটিকেও রেখেছিলেন জীবিত।
২০১৯ সালে স্বামী ও দুই সন্তানের উৎসাহে আবারও পড়াশোনায় ফেরেন শাম্মী। প্রথমে খুলনার ইকবাল নগর বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে কোর্স বন্ধ হয়ে যায়। তবুও হার মানেননি। এক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ২০২১ সালে নতুন করে শুরু করেন শিক্ষা যাত্রা। ২০২৩ সালে এসএসসি পাস করে এবার এইচএসসিতে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।
শাম্মী জানান,`পরিবারের সব কাজ শেষ করে রাত ১১টার পর পড়তে বসতাম। অনেক সময় রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে থাকতাম। প্রাইভেট শিক্ষক ছিল না—ইউটিউব দেখে ইংরেজি শিখেছি। বয়স নয়, ইচ্ছাই সবকিছু।‘
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট মো. হাফিজুর রহমান মোল্লা, শাম্মীর স্বামী, বলেন—`আমি সব সময় ওকে উৎসাহ দিয়েছি। বলেছি, ভালো ফলাফল না হলেও পাস করো, সমাজের জন্য কিছু করো। আমি বিশ্বাস করি, তার এই সফলতা অন্য নারীদেরও অনুপ্রাণিত করবে।‘
শাম্মীর বড় ছেলে মো. মামুনুর রশীদ, যিনি বর্তমানে নোয়াখালীর একটি মহিলা কলেজের প্রভাষক, মায়ের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত—`আমি পৃথিবীর অল্প কয়েকজন সন্তানের একজন, যে নিজের মায়ের ফলাফল পেয়ে গর্বিত। ২০১৯ সালে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, আজ সেটাই পূরণ হলো।‘
ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন বর্তমানে হাঙ্গেরিতে পিএইচডি করছেন সমাজবিজ্ঞানে।
এইচএসসি পাসের পর এখন অনার্সে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন শাম্মী আক্তার। তিনি বলেন, `বয়স শুধু একটা সংখ্যা। আমি চাই সমাজের অন্য নারীরাও বুঝুক—শিক্ষা অর্জনের কোনো বয়স নেই।‘
এখন তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি খুলনার করিমনগরে একটি ছোট উদ্যোগ চালাচ্ছেন, যার মাধ্যমে অন্য নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
