শ্রদ্ধা ও স্মরণে ঋত্বিক ঘটকের জন্মদিন
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:০২, ৪ নভেম্বর ২০২৫
						
									ঋত্বিক ঘটক ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের অনন্য নির্মাতা। তিনি সিনেমায় মানবিক ও সামাজিক বোধকে গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার জন্ম ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর, অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের) রাজশাহী শহরের মিয়াঁপাড়ায়। একই দিনে জন্ম নেন তার যমজ বোন প্রতীতি দেবী। বাবা সুরেশচন্দ্র ঘটক ও মা ইন্দুবালার নয় সন্তানের মধ্যে ঋত্বিক ও প্রতীতি ছিলেন সবচেয়ে ছোট। পরিবারে সাহিত্য, সংগীত ও নাট্যচর্চা ছিল নিয়মিত, যা ছোটবেলা থেকেই তার শিল্পচেতনায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
ছাত্রজীবনে শ্রমিকদের কঠোর জীবন ও নিপীড়নের সঙ্গে পরিচয় লাভ করেন ঋত্বিক। এই অভিজ্ঞতা এবং দেশভাগের বিভীষিকা তার চলচ্চিত্র চেতনার মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে। ৫০ বছরের জীবনে তিনি মাত্র আটটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ করেছেন, তবু তার প্রভাব ভারতীয় সিনেমার সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘সুবর্ণ রেখা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘নাগরিক’ এবং বাংলাদেশের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এসব সিনেমা সামাজিক বাস্তবতা, উদ্বাস্তুর বেদনা, মানবিক সংগ্রাম এবং প্রেম ও প্রতিজ্ঞার গল্প তুলে ধরে।
সত্যজিৎ রায় একবার লিখেছেন, ঋত্বিক ছিলেন বিরল প্রতিভা, তার আবেগের গভীরতা ও কারিগরি দক্ষতা ভারতীয় সিনেমায় বিরল। সীমিত বাজেট ও শর্তে সিনেমা তৈরি করেও তিনি ভিজ্যুয়াল, সাউন্ড এবং আবেগের সংমিশ্রণে এক নতুন চলচ্চিত্রভাষা তৈরি করেছিলেন। ‘অযান্ত্রিক’ ছবিতে একটি গাড়ির মধ্যেও জীবন এবং বেদনার গল্প ফুটিয়ে তোলা, ‘সুবর্ণ রেখা’ বা ‘মেঘে ঢাকা তারা’-তে অতিনাটকীয় আবেগ ব্যবহার, সবই তার সৃষ্টিশীলতার নিদর্শন।
বাংলাদেশেও ঋত্বিকের প্রভাব অম্লান। ১৯৭৩ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, যা পূর্ব বাংলার নদী তীরবর্তী মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির গল্প তুলে ধরে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে এটি বাংলাদেশের সেরা দশ সিনেমার শীর্ষে অবস্থান করে।
১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর বিশ্ব তাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। তিনি বিশ্বাস করতেন সিনেমা কেবল বিনোদন নয়, বরং মানুষের ইতিহাস, পরিচয় ও অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের শক্তিশালী মাধ্যম। তার শিল্পনিষ্ঠা ও মানবিক দর্শন এখনও নতুন প্রজন্মের নির্মাতা ও দর্শককে অনুপ্রাণিত করছে।
