নোবেল জিতেও খবর পাননি র্যামসডেল!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩:২৩, ৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৩৮, ৭ অক্টোবর ২০২৫

নিজের নোবেল পুরস্কার জয়ের খবরটিও তিনি একদিন পরে জেনেছেন! চিকিৎসাবিজ্ঞানে ২০২৫ সালের নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী ফ্রেড র্যামসডেল আপাতত এমন এক ‘অফ দ্য গ্রিড’ অভিযানে আছেন, যেখানে তার মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ফলে নোবেল কমিটিও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
র্যামসডেল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সোনোমা বায়োথেরাপিউটিকস নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে কোনো প্রান্তিক অঞ্চলে হাইকিং বা ব্যাকপ্যাকিংয়ে আছেন— হয়তো আইডাহোর পর্বতমালায়।
প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও তার দীর্ঘদিনের বন্ধু জেফ্রি ব্লুস্টোন বলেন, “আমি নিজেও তাকে ধরার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। সম্ভবত তিনি প্রকৃতির কোলে নিজের সেরা সময় কাটাচ্ছেন।”
পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন গবেষকের আবিষ্কার
র্যামসডেল চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল ভাগ করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের মেরি ব্রানকো এবং জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিমন সাকাগুচির সঙ্গে। তারা একসঙ্গে ইমিউন সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ — তথাকথিত ‘নিরাপত্তারক্ষী’ কোষ রেগুলেটরি টি-সেলস— সম্পর্কে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন।
তাদের গবেষণা ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ বিষয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা শরীরকে নিজস্ব টিস্যুর ওপর ইমিউন আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এই কাজ ভবিষ্যৎ চিকিৎসা গবেষণায় এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে অটোইমিউন রোগ ও ক্যানসারের চিকিৎসায়।
যে কারণে যোগাযোগে সমস্যা
নোবেল কমিটির সেক্রেটারি-জেনারেল থমাস পারলম্যান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে অবস্থানকারী দুজন বিজয়ীর সঙ্গেই যোগাযোগ করতে শুরুতে সমস্যা হচ্ছিল, কারণ স্টকহোমের সঙ্গে নয় ঘণ্টার সময় পার্থক্য রয়েছে। পরে ব্রানকোর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়, কিন্তু র্যামসডেলের ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
পারলম্যান বলেন, “আমরা অনুরোধ করেছি, যদি তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, যেন আমাদের কলব্যাক দেন।”
গতকাল অবশ্য তিনি খবরটা পেয়েছেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়। তাতে বলা হয়, মন্টানার রকি পর্বতমালায় ক্যাম্পিং ও হাইকিং করছিলেন ফ্রেড র্যামসডেল। হঠাৎ স্ত্রীর চিৎকার শুনে, মনে করেছেন হয়তো ভালুক এসেছে। পরে জানতে পারেন, তিনি আসলে নোবেল পেয়েছেন। আর সে কারণেই চিৎকার করে উঠেছেন স্ত্রী লরা ও’নিল।
এই বিজ্ঞানী জানান, ফোনটি এয়ারপ্লেন মুডে থাকায় তিনি নোবেল কমিটির ফোনটা পাননি। এরপর নোবেল ঘোষণায় পর তার স্ত্রীর ফোনে প্রচুর টেক্সট ম্যাসেজ আসে। তখনই স্ত্রী নিশ্চিত হয়ে ‘তুমি নোবেল জিতেছো!’ বলে চিৎকার করে ওঠে। র্যামসডেল প্রথমে বিশ্বাস করেননি।
র্যামসডেল বলেন, তিনি সাধারণত ছুটির সময় ফোনে অনলাইনে থাকেন না। তিনি তিন সপ্তাহের হাইকিং ট্রিপের প্রায় শেষ পর্যায়ে মন্টানার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের কাছে অবস্থান করছিলেন।
জানা গেছে, নোবেল অ্যাসেম্বলির সাধারণ সম্পাদক থমাস পারেলম্যানের সঙ্গে কথা বলতে প্রায় ২০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। পারেলম্যান জানান, ২০১৬ সালে তিনি এই দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো পুরস্কারবিজয়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে এতটা সময় লাগেনি।
র্যামসডেল নোবেল পাওয়ার পর বলেছেন, আমি কৃতজ্ঞ এবং বিনীত। এই কাজের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত।
ইমিউন বিজ্ঞানে বিপ্লবের সূচনা
৭৪ বছর বয়সী জাপানি অধ্যাপক শিমন সাকাগুচি ১৯৯৫ সালে প্রথমবার এই নতুন শ্রেণির কোষ আবিষ্কার করেন, যা শরীরকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে। এরপর ২০০১ সালে ব্রানকো ও র্যামসডেল এই কোষগুলোর কার্যপ্রণালি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাদের কাজের ফলেই আজ বিশ্বজুড়ে নানা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি পরীক্ষা চলছে।
মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম নিয়ে যাদের গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন ফ্রেড র্যামসডেল।