জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান ডব্লিউএইচওর
স্নায়ুজনিত রোগে বছরে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:৩৫, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বে প্রতিবছর স্নায়ুজনিত রোগে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এমনকি বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি জনসংখ্যা কোনো না কোনো স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত।
এই অবস্থায় সতর্ক করে দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, অথচ বিশ্বের মাত্র এক-তৃতীয়াংশেরও কম দেশ স্নায়ুজনিত রোগ মোকাবেলায় জাতীয় নীতি গ্রহণ করেছে।
১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন নিউরোলজ ‘ প্রতিবেদনে স্নায়ুজনিত রোগের এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে ২০২১ সালের মৃত্যুহার ও অক্ষমতার জন্য শীর্ষ ১০ ধরণের স্নায়ুজনিত রোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- স্ট্রোক, নবজাতক এনসেফালোপ্যাথি, মাইগ্রেন, অ্যালঝাইমারস এবং অন্যান্য স্মৃতিভ্রংশ, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি, মেনিনজাইটিস, আইডিওপ্যাথিক এপিলেপসি বা মৃগীরোগ, অকাল জন্মের সাথে সম্পর্কিত জন্মজনিত স্নায়বিক জটিলতা, অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্যান্সার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে নিম্নআয়ের দেশগুলোতে উচ্চআয়ের দেশের তুলনায় ৮০ গুণ কম নিউরোলজিস্ট রয়েছেন। অনেক দেশে জাতীয় পরিকল্পনা, বাজেট এবং প্রশিক্ষিত জনবল একেবারে অনুপস্থিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য উন্নয়ন বিভাগের সহকারী মহাপরিচালক ড. জেরেমি ফারার বলেন, “বিশ্বের প্রতি তিনজনের একজনের মস্তিষ্কে কোনো না কোনো ধরনের সমস্যা রয়েছে। অথচ, অধিকাংশ মানুষের জন্য এসব সেবা এখনো অধরা, বিশেষ করে গ্রামীণ ও উপেক্ষিত অঞ্চলে। স্নায়বিক রোগে আক্রান্তরা প্রায়ই অবহেলা, সামাজিক বঞ্চনা ও আর্থিক কষ্টের মুখে পড়ে। রোগী ও পরিবারের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে মস্তিষ্কজনিত স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র ১০২টি দেশ এই জরিপে অংশ নিয়েছ, যা মোট সদস্য দেশের ৫৩ শতাংশ। এ থেকেই বোঝা যায় স্নায়বিক স্বাস্থ্য কতটা উপেক্ষিত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মাত্র ৩২ শতাংশ বা ৬৩টি দেশ জাতীয় পর্যায়ে স্নায়বিক রোগ মোকাবেলায় নীতি গ্রহণ করেছে। আর মাত্র ১৮ শতাংশ বা ৩৪টি দেশ এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তহবিল বরাদ্দ করেছে। অর্থাৎ, অধিকাংশ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখনো বিভাজিত, তহবিল সংকটে এবং এসব রোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবায় স্নায়বিক রোগের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত করেছে মাত্র ২৫ শতাংশ বা ৪৯টি সদস্য দেশ। এসব দেশ সেবাপ্যাকেজে ‘অত্যাবশ্যক সেবা’ হিসেবে রেখেছে- স্ট্রোক ইউনিট, শিশু নিউরোলজি, পুনর্বাসন ও উপশম সেবা। তবে এসব বেশিরভাগই শুধু শহরকেন্দ্রিক, গ্রামীণ জনপদে এসব সেবা কার্যত অনুপস্থিত।
প্রতিবেদনে স্নায়ুজনিত স্বাস্থ্য সেবায় জনবল ও পরিচর্যার ঘাটতি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, নিম্নআয়ভুক্ত দেশে প্রতিলাখে নিউরোলজিস্ট সংখ্যা ৮২ গুণ কম। এই রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা দেয় মাত্র ৪৬টি দেশ ও মাত্র ৪৪টি দেশ পরিচর্যাকারীদের জন্য আইনি সুরক্ষা রেখেছে। ফলে, অধিকাংশ পরিচর্যাকারী, যাদের বেশিরভাগই নারী, তারা বিনা সহায়তায়, বিনা স্বীকৃতিতে পরিবারে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, যা সমাজে লিঙ্গবৈষম্য ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।
সংকট মোকাবিলায় সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, গতিশলী নেতৃত্ব এবং টেকসই বিনিয়োগের মাধ্যমে স্নায়ুবিক ব্যাধিগুলো নিয়ন্ত্রণ ও অগ্রাধিকার দিতে হবে, সার্বজনীন স্বাস্থ্য কাভারেজ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে স্নায়ুবিক যত্নের পরিধির বিস্তার ঘটাতে হবে ও মূল ঝুঁকি লক্ষ্য করে সমন্বিত আন্তঃদেশীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে স্নায়ুজনিত স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে কার্যকর প্রচারনা চালাতে হবে।