চাকসু ভোটে অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের ৮ অভিযোগ
চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২:৩৯, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ এনেছে সুফিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে প্যানেলটি।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে চাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফরহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “নির্বাচনের কিছু অনিয়মের বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনকে আটটি বিষয় বলেছি।”
এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বলেন, চাকসু নির্বাচনের শুরুতে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও প্রশাসনের ‘একপেশে আচরণ, বিভিন্ন প্রার্থীর শৃঙ্খলা লঙ্ঘন’ করাসহ বিভিন্ন আপত্তিকর বিষয় উঠে এসেছে, যা এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
ফরহাদুল ইসলাম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ভবনের ২১৪ নম্বর কক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষরবিহীন ২০টি ব্যালট পেপার বাক্সে প্রবেশ করানো হয়েছে। দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানানোসহ মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া স্বত্বেও প্রশাসন কোনোধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।”
ফরহাদুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন ভোটারদের সাথে কথা বলে জেনেছি, পানি দিলেই মুছে যাচ্ছে অমোচনীয় কালি। এটা প্রশাসনের উদ্দেশ্যমূলক গাফিলতি। অনেকের মতো আমরাও এই বিষয়টি জাল ভোটকাণ্ডে ব্যবহার হওয়ার সমূহ আশঙ্কা প্রকাশ করছি।”
ভোটকেন্দ্রের গোপন বুথে উদ্দেশ্যমূলক ছাপানো প্যানেলের কপি রেখে আসার অভিযোগ অসংখ্য ভোটাররা করেছেন- এমন দাবি করে তিনি বলেন, “প্রিজাইডিং অফিসাররা এ ঘটনা জানার পরেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্যানেলভুক্ত একজন প্রার্থীর দেওয়া তথ্য মতে, বিবিএ ফ্যাকাল্টি ভবনের ৩৩৫ নম্বর রুমে আগে ভোট দেওয়া একজনের আইডি কার্ড নিয়ে আরেকজন ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অনেকগুলো ভোট গ্রহণ কক্ষে ভোটারদের ব্যালট পেপার দেওয়ার পর স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি।”
সব প্যানেলের জন্য অনুমোদিত পর্যবেক্ষক তালিকা দেওয়া হলেও ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের জন্য কোনো পর্যবেক্ষক কার্ড দেওয়া হয়নি দাবি করেন তিনি এবং একে ‘বিমাতাসুলভ আচরণ’ বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “আইটি ভবনের ৩০৯ নম্বর ভোট কক্ষের সামনে রাখা টেবিলে একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের লিফলেট রাখা ভোটারদের প্রভাবিত করা, আইটি ভবন, চাকসু ভবন হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনের সামনে অন্য একটি প্যানেলের ক্যাম্প বসানো হয়েছে যা আচরণ বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “প্রার্থীদের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের বাইরে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বাধা দিয়েছেন এবং আমার সাথে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অশোভন আচরণ করেছেন। আমরা মনে করি, একটি বিশেষ পক্ষের হয়ে তারা কাজ করছে। এধরনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা এধরনের কর্মকাণ্ডের তদন্তপূর্বক বিচার চাইছি।”
ফরহাদুল ইসলাম বলেন, “ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় ছবিযুক্ত আইডি কার্ডগুলো যথাযথভাবে পরীক্ষা না করার কারণে বহিরাগতর সংখ্যা ছিল বেশি। নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে কাজ করতে আসা বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারাসহ নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন।”
এই ভিপি প্রার্থী আরও বলেন, “বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতা ছিল দৃষ্টিকটু। পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে তাদের অবস্থান ছিল রহস্যজনক। এছাড়া নির্বাচনি আচরণ বিধিতে উল্লেখ ছিল কেন্দ্রের ১০০ মিটারের ভেতরে কোনো প্রার্থী প্রচার চালানো বা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারবেন না। কিন্তু বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থী ভোট কেন্দ্রের কাছাকাছি গিয়ে ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করেছেন। এমনকি কাগজে ব্যালট নম্বর লিখে দিয়েছেন।”
৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন যে আমেজ নিয়ে এসেছিল তা প্রশাসন ‘অদূরদর্শিতা ও ব্যর্থতার’ কারণে অনুভব করতে পারেননি দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা বর্জন করছি না, কারণ আমরা চাই বর্জন করলে একটা পক্ষ বর্জন নাও করতে পারে। এতে বুঝা যেতে পারে, চাকসুর নির্দিষ্ট কোনো প্যানেল বিজয় লাভ করবে। এতে চাকসু গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত। যাতে নজির স্থাপন হয় আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে বিচার হয়।”