আজ বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস
দেশে প্রতি ৫ জনে একজন এই রোগে আক্রান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২:০৪, ১২ অক্টোবর ২০২৫

প্রতি বছর ১২ অক্টোবর বিশ্বের নানা দেশে পালিত হয় ‘বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস। জয়েন্টের ব্যথা, প্রদাহ ও পেশীজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দিবসটি পালনের উদ্যানও নেয় বিশ্ব।
এ বছরও দিনটির মূল বার্তা—“জ্ঞাত পছন্দ, উন্নত ফলাফল”—স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে সঠিক তথ্যই পারে রোগীর জীবনযাত্রা বদলে দিতে।
সম্প্রতি এক গবেষনায় দেখা গেছে , প্রতি পাঁচজনের একজন এই রোগে আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে আর্থ্রাইটিস বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন দেশের মতো আজ রবিবার (১২ অক্টোবর) বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস-২০২৫।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘আপনার স্বপ্ন অর্জন করুন।’ যার উদ্দেশ্য যার বাত ও পেশিবহুল রোগে (আএরএমডি) আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে অনুপ্রাণিত করা।
? কী এই আর্থ্রাইটিস?
‘আর্থ্রাইটিস’ বলতে বোঝায় এমন সব রোগ, যেখানে শরীরের এক বা একাধিক জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে দেখা দেয় ব্যথা, ফোলাভাব, কোষ্টকাঠিন্য এবং চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রকারভেদ ১০০-এরও বেশি। সবচেয়ে সাধারণ হলো অস্টিওআর্থ্রাইটিস ( এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস: এটি মূলত বয়সজনিত বা জয়েন্টের ক্ষয়জনিত অবস্থা। হাঁটু, নিতম্ব বা আঙুলে বেশি দেখা যায়।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস: এখানে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজস্ব সুস্থ টিস্যুকে আক্রমণ করে। এর ফলে জয়েন্ট ফুলে যায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক সময় একসঙ্গে দুই পাশের জয়েন্ট আক্রান্ত হয়।
সূচনা ও ইতিহাস
বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবসের সূচনা হয় ১৯৯৬ সালে, আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড রিউম্যাটিজম ইন্টারন্যাশনাল এর উদ্যোগে।
তারপর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, গবেষক ও রোগী-সহায়তা সংস্থা একত্রিত হয়ে দিনটিকে ঘিরে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে আসছে।
এই প্রচেষ্টা শুধু রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসা নয়—বরং সামাজিক সহমর্মিতা গড়ে তোলার আন্দোলনও।
কেন এই দিবস গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের রিউম্যাটিক বা পেশীবহুল রোগে ভুগছেন। অনেক সময় ব্যথাকে ‘বয়সের লক্ষণ’ ভেবে অবহেলা করা হয়, অথচ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস তাই মানুষকে মনে করিয়ে দেয় “যত দ্রুত শনাক্ত, তত কম জটিলতা।”
এই দিবস সরকার ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে আহ্বান জানায় যাতে আর্থ্রাইটিস-আক্রান্ত মানুষদের জন্য উন্নত চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
বাংলাদেশে প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশেও আর্থ্রাইটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। শহরাঞ্চলে দীর্ঘসময় বসে কাজ, শারীরিক অনুশীলনের অভাব, স্থূলতা এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, হালকা ব্যথা বা ফোলাভাবকে উপেক্ষা না করে প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করলেই বড় জটিলতা রোধ করা সম্ভব।
আর্থ্রাইটিস শুধু একটি শারীরিক অসুস্থতা নয়—এটি কর্মক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক জীবনের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে।
তাই বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়,“ব্যথা লুকিয়ে নয়, জেনে ও বুঝে লড়াই করতে হবে।”