কে হচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী
পদ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, তদবিরে সরগরম গণপূর্ত অধিদপ্তর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:০৩, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২১:০০, ১২ অক্টোবর ২০২৫

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার আগামী ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন। তার বিদায়ের আগেই নতুন প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগকে ঘিরে অধিদপ্তরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা, দৌড়ঝাঁপ ও ক্ষমতার সমীকরণ। কে হচ্ছেন গণপূর্তের পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী—এ নিয়েই এখন সরগরম গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের করিডোর।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতর ও বাইরে, মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রকল্প কার্যালয় পর্যন্ত এখন নানা গোষ্ঠীর তদবির চলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজের অবস্থান মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। কেউ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, কেউবা রাজনৈতিক লবির মাধ্যমে নিজেকে প্রধান প্রকৌশলীর উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই দৌড়ে আছেন ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মইনুল ইসলাম, ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল খায়ের এবং প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান। এ ছাড়া একটি মহল বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারকে চুক্তিভিত্তিকভাবে আরও এক মেয়াদে রাখার তদবিরও শুরু করেছে।
মইনুল ইসলাম: বিতর্কের মাঝেও লবিতে সক্রিয়
১৫তম বিসিএস ক্যাডার প্রকৌশলী মইনুল ইসলাম গণপূর্তের মেধাতালিকায় শীর্ষে ছিলেন একসময়। তবে তার ক্যারিয়ারে রয়েছে বিতর্কের ছাপ। ২০০৯ সালে বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০১৩ সালে তাকে চাকরিচ্যুত করে মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে বিশেষ বিবেচনায় পুনর্বহাল হন তিনি। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী।
মইনুলকে ঘিরে বরিশাল ও সিলেট কেন্দ্রিক প্রকৌশলীদের একটি গোষ্ঠী এখন সক্রিয় তদবির চালাচ্ছে। এই গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ, যার অতীত ঘিরেও রয়েছে নানা বিতর্ক।
আবুল খায়ের: অভিযোগ ও অভ্যন্তরীণ লবি
ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল খায়েরকেও প্রধান প্রকৌশলীর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি, টেন্ডার বাণিজ্য ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। গোপালগঞ্জ, খুলনা ও চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পারসেন্টেজ দাবি এবং ঘুষগ্রহণের অভিযোগে তদন্তও হয়েছিল।
তিনি এখন বিএনপি-ঘনিষ্ঠ পরিচয় তুলে ধরে নিজেকে ‘বঞ্চিত কর্মকর্তা’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন বলে জানা গেছে। তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন ঢাকা ফিল্ডের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম সানাউল্লাহ। সানাউল্লাহ আওয়ামী পরিবারের সন্তান হলেও বর্তমানে জামায়াতপন্থী একটি গোষ্ঠীর ছায়ায় আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খালেকুজ্জামান: প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারসাম্য রক্ষাকারী প্রার্থী
অন্যদিকে প্রকৌশলী খালেকুজ্জামানকে তুলনামূলক পেশাদার ও মৃদু প্রকৃতির প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে একাধিক প্রভাবশালী আমলা, রাজনীতিক ও ঠিকাদারদের সমর্থনে শক্তিশালী বলয় গড়ে তুলেছেন। তবে তার বিরোধীরাও পিছিয়ে নেই। অতীতে বিদেশে শিক্ষা ছুটি গ্রহণ ও সনদ যাচাই সংক্রান্ত প্রশ্ন এবং বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে ভূমিকা নিয়ে তার বিরোধীরা মিডিয়ায় নানা প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এক্সটেনশন তদবিরে শামীম আখতার বলয়
বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তার মেয়াদ শেষে আবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে সক্রিয় কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ রানা, আজমূল হক মুন এবং শেরে বাংলা নগর-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম প্রমুখ।
জানা গেছে, তারা আর্থিকভাবে এই লবিকে জোরদার করার চেষ্টা করছেন, যাতে শামীম আখতারকে আরও এক বছরের জন্য রাখা যায়।
ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দৌড়ে অনিশ্চয়তা
গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদে আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে শুধু মেধা নয়, রাজনৈতিক ভারসাম্যও বড় ভূমিকা রাখে। মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেননি। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নাম চূড়ান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, ভবন নির্মাণ ও সরকারি স্থাপনা ব্যবস্থাপনার অন্যতম মূল প্রতিষ্ঠান। এর নেতৃত্বে আসীন ব্যক্তি শুধু প্রশাসনিক কর্তৃত্ব নয়, বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রভাবও বহন করেন। তাই এই পদকে ঘিরে তদবির, লবি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নতুন নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে—এইবার সেই চেয়ার কার ভাগ্যে জুটবে? ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই মিলবে তার জবাব।