বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

আজ চাকসু নির্বাচন, উৎসবমুখর ক্যাম্পাস

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:০৮, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

আজ চাকসু নির্বাচন, উৎসবমুখর ক্যাম্পাস

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

ভোট গ্রহণ শেষে হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে ভোট কেন্দ্রে আর কেন্দ্রীয় ফলাফল ঘোষণা হবে ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) অনুষদে।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকাল থেকে মোতায়েন থাকবেন বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। ক্যাম্পাসে নির্বাচনি আমেজ। শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা। দীর্ঘদিন পর ভোট হওয়ায় উৎসবের মাত্রাটা বেশি।

নির্বাচনের বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, আমাদের নির্বাচনের সব কাজ ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। আশা করছি উৎসবমুখর পরিবেশে একটি ভালো নির্বাচন হবে। 

কেন্দ্রিয় সংসদের পদ ২৬, প্রার্থী ৪১৫

পদ এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রিয় সংসদের মোট পদ ২৬টি ও প্রার্থী ৪১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৩৬৮ জন এবং নারী প্রার্থী ৪৭ জন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪টি আবাসিক হল ও ১টি হোস্টেল রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ছাত্রদের এবং পাঁচটি ছাত্রীদের। এর বাইরে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল রয়েছে। এই ১৫টি আবাসনের নামে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকছে নির্বাচনে। 

নির্বাচনে ১৪ হল ও ১টি হোস্টেলে ২০৬টি পদ আছে। প্রতি হলে পদ আছে ১৪টি করে। হোস্টেলে পদ আছে ১০টি। এই ২০৬টি পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৪৯৩ জন। এর মধ্যে ৯টি ছাত্র হলের প্রার্থীসংখ্যা ৩৫০ জন এবং ৫টি ছাত্রী হলে প্রার্থীসংখ্যা ১২৩ জন। এ ছাড়া শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে প্রার্থী হয়েছেন ২০ জন।

ভোট কেন্দ্র ১৫, বুথ ৬৭

এবার সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে চাকসুর নির্বাচন। মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। ৫টি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রের ৬৭টি কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। প্রতিটি কক্ষে থাকবে পাঁচটি ব্যালট বাক্স এবং পাঁচজন করে এজেন্ট। একটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৫০০ ভোটার ভোট দিতে পারবেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ২৫০টি সিসি ক্যামেরা থাকবে।

যে ৫টি ভবনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলো হলো- আইটি ভবন (ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ), শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবন (কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ নতুন ভবন), বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভবন (সমাজবিজ্ঞান অনুষদ), ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন।

নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি নেই

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিদর্শন করেন র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান। এ সময় তিনি এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোনও হুমকি দেখছি না। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কোনও হুমকি নেই। শুধু বাইরে থেকে ইন্ধন না এলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে এপিবিএন প্রচুর পরিমাণে নিয়োগ থাকবে এবং আমাদের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কমপক্ষে আটটি টহল দল সব সময় থাকবে এবং অতিরিক্ত রিজার্ভ ফোর্স আমরা রাখবো, প্রয়োজন হলে তারাও আসবে। এ ছাড়াও আমাদের সাদা পোশাকে বেশকিছু গোয়েন্দা সংস্থা থাকবে, গোয়েন্দার লোকজন থাকবেন। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হয়েছে। আশা করি, নির্বাচনটা খুব সুন্দরভাবে, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।’

কারা ভিপি ও জিএস প্রার্থী

এবারের চাকসু নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে ১৩টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিজেদের নামে প্যানেল দিয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’। ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ‘দ্রোহ পর্ষদ’ নামে প্যানেল দিয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলিয়ে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

মূল পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে একজন মাত্র নারী প্রার্থী হলেন চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ। তিনি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি-স্যাড ও ছাত্র ফেডারেশনের ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়ছেন। এ প্যানেলে ভিপি পদে ভোট করছেন আবির বিন জাবেদ।

ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি ও জিএস পদে লড়ছেন যথাক্রমে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় ও মো. শাফায়াত হোসেন, ছাত্রশিবিরের ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে ইব্রাহীম হোসেন রনি ও সাঈদ বিন হাবিব, ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলে ধ্রুব বড়ুয়া ও সুদর্শন চাকমা, ‘দ্রোহ পর্ষদ’ প্যানেলে ঋজু লক্ষী অবরোধ ও  ইফাজ উদ্দিন ইমু, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেলে মাহফুজুর রহমান ও রশিদ দিনার, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র মজলিসের ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে তামজিদ উদ্দিন ও সাকিব মাহমুদ রুমি লড়ছেন

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে ভিপি ও জিএস প্রার্থী যথাক্রমে আবদুর রহমান রবিন ও মোহাম্মদ আবদুর রহমান, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ’ প্যানেলে সাইদ মো. রেদওয়ান ও জিহাদ আরাফাত, ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলে’  তাওসিফ মুত্তাকি চৌধুরী ও মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন লড়ছেন।

সুফিপন্থি শিক্ষার্থীদের ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের’ ভিপি ও জিএস প্রার্থী যথাক্রমে ফরহাদুল ইসলাম ও ইয়াসিন উদ্দিন সাকিব, বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্টের ‘রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ প্যানেলে কেফায়াত উল্লাহ ও শাহরিয়ার উল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এবার সপ্তম নির্বাচন

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। এর মধ্যে প্রথম নির্বাচনটি হয় ১৯৭০ সালে। আর সর্বশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ফলে এখন যারা ভোট করছেন, তাদের কেউই আগের সংসদ দেখার সুযোগ পাননি। যদিও ১৯৭৩ সালের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

প্রথম ভিপি মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও জিএস আবদুর রব

১৯৭০ সালের প্রথম চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন ছাত্রলীগের আবদুর রব। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন চাকসু জিএস আবদুর রব। ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় চাকসু নির্বাচন। এ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের তৃতীয় চাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ভিপি ও গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি হন জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং জিএস হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী। ১৯৮১ সালে চাকসুর পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সে সময়ের নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ চাকসু নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি নির্বাচিত হন। আর জিএস নির্বাচিত হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ।

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ: ডব্লিউএইচও
বুধবার থেকে শুরু অনলাইন জামিননামা প্রক্রিয়া
শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু