নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা আজ
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কি ট্রাম্পের জন্য দেরি হয়ে গেল?
সোমবারই সিদ্ধান্ত হয়েছে কে পাবেন পুরস্কার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:১৫, ১০ অক্টোবর ২০২৫

নোবেল পুরস্কারের কমিটি
নোবেল শান্তি পুরস্কার আজ শুক্রবার ঘোষণা করা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতা করে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। এরমধ্যে নিজে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে নিজের আগ্রহ এবং পাওয়ার কারণও বলেছেন। এরমধ্যে নোবেল ঘোষণার ঠিক আগের দিন গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
কিন্তু কূটনৈতিক ও সবমহলই বলছে, তা সম্ভবত দেরিতে এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য, যিনি মরিয়া হয়ে এই পুরস্কার জিততে চান। ফরাসী সংবাদ সংস্থা আজও এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ট্রাম্পের নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা।
নরওয়ের রাজধানী অসলোতে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা (গ্রিনিচ সময় সকাল ৯টা) নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে।
এই ঘোষণার কিছু ঘণ্টা আগেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়, যা গাজায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের ইতি টানতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের চাপ ও মধ্যস্থতা এই চুক্তি আনতে ভূমিকা রাখলেও, তা নোবেল কমিটির বিবেচনার জন্য এসেছে অনেক দেরিতে।
নোবেল কমিটির পাঁচ সদস্য সোমবার তাদের শেষ বৈঠক করেছেন এবং সেদিনই তারা পুরস্কার সংক্রান্ত বিবৃতি চূড়ান্ত করেন—অর্থাৎ, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেই বৈঠকের আগেই নেওয়া হয়ে গেছে।
ইতিহাসবিদ ও শান্তি পুরস্কার বিশেষজ্ঞ আসলে স্বেন এএফপিকে বলেন, “গাজার চুক্তিটি পুরস্কার নির্বাচনের ক্ষেত্রে একেবারেই কোনো প্রভাব ফেলবে না, কারণ নোবেল কমিটি ইতোমধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।”
তিনি নিশ্চিতভাবে বলেন, “ট্রাম্প এই বছর পুরস্কার জিতবেন না। আমি শতভাগ নিশ্চিত।”
স্বেনের মতে, ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে গাজায় ‘অবাধ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন বোমা বর্ষণের, এবং মার্কিন সামরিক সহায়তাও জোরালোভাবে অব্যাহত রেখেছেন।
এই বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প বারবার দাবি করছেন যে তিনি শান্তি পুরস্কারের যোগ্য—কারণ তিনি “নয় মাসে আটটি যুদ্ধ থামিয়েছেন।”
বৃহস্পতিবার এএফপির প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “আমি জানি না তারা (কমিটি) কী করবে, তবে আমি জানি, ইতিহাসে কেউ এত অল্প সময়ে আটটি যুদ্ধ থামাতে পারেনি। আমি তা করেছি, গাজা তার মধ্যে সবচেয়ে বড়।”
কিন্তু অসলোতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের কোনো সুযোগ নেই। কারণ তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নোবেল শান্তি পুরস্কারের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক—যে আদর্শ ১৮৯৫ সালে আলফ্রেড নোবেল তার উইলে নির্ধারণ করেছিলেন।
এই বছর মোট ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংস্থাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তবে তালিকাটি গোপন রাখা হয়।অসলোতে জল্পনা তুঙ্গে—কে জিততে পারেন তা নিয়ে। আলোচনায় আছেন সুদানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’, যারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে নিজেদের জীবন বাজি রেখে সাধারণ মানুষকে খাদ্য ও সহায়তা দিচ্ছেন।
তালিকায় আরও আছেন রুশ নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া, এবং ইউরোপের ‘অফিস ফর ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামের নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সংস্থা।
নোবেল কমিটি চাইলে এমন কাউকে বেছে নিতে পারে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রকে বিরক্ত করতে পারে—যেমন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) কিংবা ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), বা গণমাধ্যম স্বাধীনতার জন্য কাজ করা সংস্থা যেমন ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’ বা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-ও আলোচনায় রয়েছে।
নোবেল ইনস্টিটিউটের মুখপাত্র এরিক আসহেইম বলেন, “এটা নিশ্চিত—এই বছরও একজন বিজয়ী থাকছেন,”—এভাবে তিনি গুজব নাকচ করেন যে চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে হয়তো পুরস্কার দেওয়া নাও হতে পারে।
গত বছর পুরস্কার পেয়েছিল ‘নিহন হিদানকিও’ হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন, যারা পরমাণু অস্ত্রের বিরোধিতা করে কাজ করছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সংস্থা একটি সনদ, একটি সোনার মেডেল এবং ১.২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৪ কোটি টাকার) চেক পান।
এই সপ্তাহে চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য ও শান্তি পুরস্কার ঘোষণা শেষে আগামী সোমবার অর্থনীতির পুরস্কার ঘোষণার মাধ্যমে ২০২৫ সালের নোবেল মৌসুম শেষ হবে।