মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

| ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বন্দর ইজারায় আমেরিকার স্বার্থরক্ষা: রুহিন হোসেন প্রিন্স

প্রকাশ: ১৮:৪৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৪৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

বন্দর ইজারায় আমেরিকার স্বার্থরক্ষা: রুহিন হোসেন প্রিন্স

রুহিন হোসেন প্রিন্স, ছবি : ফাইল

বন্দর ইজারা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আমেরিকার স্বার্থরক্ষা করতে চায় বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সমাজকাল ডটকমের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ এর পক্ষে নয় বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে দেশবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ভূঁইয়া আশিক রহমান

সমাজকাল: মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে লালদিয়া টার্মিনাল ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল দেওয়া হয়েছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস আর সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এর হাতে। ব্যাপক বিরোধিতার পরও অন্তবর্তী সরকার বন্দর চুক্তি সম্পন্ন করেছে। কী মনে হয় আপনার, সরকার কেন এই চুক্তি করতে গেছে?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমাদের অর্থনীতির লাইফলাইন, দেশের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর অন্যতম। এর আগেও এই বন্দরকে ১৮৮ বছরের জন্য লিজ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিলো। তখন আন্দোলনকারী শক্তির কথা শুনে ও আদালতের রায়ে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছিলো। এর বাইরেও বিভিন্ন সরকারের সময় চেষ্টা করা হয়েছিলো। জনগণের কণ্ঠস্বরের কারণে বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারেনি কোনো সরকারই। এই সরকার আসার পরে, যেটি তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না, সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। যার বিরোধিতা জনগণ করেছে। আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ বন্দর ইজারা দেওয়ার পক্ষে নয়। 

সমাজকাল: চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক। তবুও বন্দর ইজারা কেন?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক। বিদেশিদের কাছে বন্দর ইজারা দেওয়ার মানে সা¤্রাজ্যবাদের অনুপ্রবেশর সুযোগ পেয়ে যাবে। আর লাভজনক একটা বন্দর কেন বিদেশের কাছে আমরা দিয়ে দিতে যাবো? সরকার মানুষের কথা না শোনে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। একইসঙ্গে নতুন বন্দর নির্মাণ ও অন্যান্য বন্দরও বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ অব্যাহত রাখায় আমরা তার বিরোধিতা করি। কিন্তু আমরা খুবই ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, ১৭ নভেম্বর একদিকে জুলাই হত্যার বিচারের রায় হচ্ছে, তখনই তারা বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করলো। চুক্তির শর্ত গোপন রাখলো। এতো তড়িঘড়ি অতীতে কখনো এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। আমরা মনে করি, এসব চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী। অনতিবিলম্বে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। দেশের মালিকানা ঠিক রেখে, দেশের কর্তৃত্বেই বন্দর পরিচালনা করা দরকার। 

সমাজকাল: সরকার যদি চুক্তি বাতিল না করে, আপনাদের অবস্থান কী হবে?


রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমরা যদি কখনো মনে করি, বন্দরের মেশিনারিজের উন্নতি করতে হবে। কিনতে হবে। কোনো বিশেষজ্ঞ নিয়োগ প্রয়োজন হলে সেটা আমরা করতে পারি। কিন্তু এ ধরনের ইজারার বিরোধী আমরা। সরকার যদি চুক্তি বাতিল না করে, তাহলে আমরা আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবো। তবুও দেশের স্বার্থবিরোধী এই চুক্তি আমরা ঠেকাবো। অন্তবর্তী সরকার যদি আমাদের কথা না শোনে, তাহলে আমরা আশা করবো নতুন সরকার এসে এই চুক্তি বাতিল করবে। দেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের চুক্তির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরও আইনের মুখোমুখি করবে বলে আমরা মনে করি। 

সমাজকাল: বন্দর লাভজনক। তাহলে কেন সরকার এতো ইন্টারেস্ট ফিল করছে বিদেশিদের কাছে বন্দর ইজারা দিতে। সরকার যেসব যুক্তি দিচ্ছে তা কি যৌক্তিক?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: সরকারের বিবেচনা গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে লাভজনক বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দিলে দেশের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়। আমরা এমন কোনো সুযোগ করে দিতে পারি না অন্যদের, সেই সুযোগে বিশেষ অনুপ্রবেশ ঘটে। দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানের পক্ষে আমরা নেই। কোনো সরকার জনগণের স্বার্থের বাইরে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদ অথবা অন্যদের স্বার্থরক্ষা করতে চায়, তখন তারা এসব জনস্বার্থবিরোধী কাজ করে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে আমেরিকা ও অন্য দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে চায়। এ কারণেই জনগণের বিরোধিতা সত্ত্বেও বন্দর চুক্তি করছে, কার্যত কাউকে কিছু না জানিয়েই। প্রকারান্তরে আমেরিকান সরকারের স্বার্থরক্ষা করা হচ্ছে বলেই আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। 

সমাজকাল: পূর্ববর্তী সরকার অভিযোগ করতো, আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা না করার কারণেই গণআন্দোলন। সরকার হটানোর পেছনে আমেরিকা ও তার মিত্ররা একসঙ্গে কাজ করেছে বলেই চব্বিশ হয়েছে। তাহলে কী আগের সরকারের অভিযোগই সঠিক বলে প্রমাণিত হচ্ছে?


রুহিন হোসেন প্রিন্স: এ বিষয়ে আরও তথ্য নিয়ে বলতে হবে। তবে কুয়েতের ডিপি ওয়ার্ল্ড প্রকৃতপক্ষে আমেরিকারই মালিকানাধীন কোম্পানি। আগের সরকারও তো চেষ্টা করেছিলো। এসবই সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষা। আগের সরকার করেছে। এ সরকারও আমেরিকার স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত। 

সমাজকাল: আগের সরকার তো চুক্তি থেকে বিরত ছিলো। কিন্তু বর্তমান সরকার তো ১৩ দিনে চুক্তি সম্পাদন করে ফেলেছে।

 
রুহিন হোসেন প্রিন্স: সেটা সময়ই বলে দেবে, কী কারণে বিরোধিতা সত্ত্বেও এতো দ্রুত বিদেশিদের হাতে বন্দর দিয়ে দিলো। সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষা করছে, এটিই আসল কথা।

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

সব অ্যাম্বুলেন্সকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনার দাবি মালিকদের
জুলাইয়ের আবহ ডিসেম্বরে ‘ইকোস অব রেভ্যুলেশন ২.০’ কনসার্ট
নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ১৬২ কাঠা জমিসহ ৫৩ দলিল জব্দ তিন ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ
সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত
নারী ক্রিকেট বিভাগের প্রধান হলেন রুবাবা
অপরাধী হস্তান্তরে চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
১৮ দিনে ডেঙ্গু রোগী ১৭ হাজার ছাড়ালো
এনসিপি ও বাসদ মার্কসবাদীকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন ও স্ত্রী সিতারার ৩৩ ব্যাংক হিসা
আমজনতার দলসহ ইসির পুনর্বিবেচনায় আরও ৭ দল
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি : ভবিষ্য তহবিল বাধ্যতামূলক
হাসিনা-কামালকে দেশে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাইবে প্রসিকিউশন
স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার মূল্য পুনর্নির্ধারণ
আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না: ড. ইউনূস
বিদেশ থেকে সার-এলএনজি, ইউনিসেফ থেকে ভ্যাকসিন কিনবে সরকার
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের যত সম্পদ
কারাবন্দি আইভীকে আরও ৫ মামলায় গ্রেফতার
১৭০৫০টি শটগান পাচ্ছেন আনসাররা
শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ডেনমার্ক
পাকিস্তানে ঢুকে সন্ত্রাসবাদ খতম করবে ‘ধুরন্ধর’ রণবীর