শেখ হাসিনা মামলার পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কী? কী কী ঘটতে পারে এখন
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:৩২, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় হিসেবে সোমবার ঘোষণা করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচটি ধারার প্রত্যেকটিতেই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে—এটি বিচার প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ নয়।
এই মামলার আরেক আসামি, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন। শেখ হাসিনা ও কামাল পলাতক থাকায় বিচার অনুপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন। কিন্তু শর্ত হলো—পলাতক ব্যক্তিকে প্রথমে আত্মসমর্পণ বা গ্রেফতার হতে হবে।
অর্থাৎ শেখ হাসিনা ও কামাল আপিল করার জন্য প্রথমেই আত্মসমর্পণ করতে হবে। তারপর তাদের আইনজীবীরা আপিল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার অসঙ্গতি, সাক্ষ্যগ্রহণের ত্রুটি বা আইনি বিচ্যুতি তুলে ধরে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।
আপিলের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা
রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে
আপিল বিভাগকে তা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা আছে
আপিল বিভাগ চাইলে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল, পরিবর্তন কিংবা বাতিল—যে কোনো সিদ্ধান্তই দিতে পারে।
রিভিউ: বিচার প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ
আপিলে দণ্ড বহাল থাকলে আপিল বিভাগের কাছেই করা যাবে রিভিউ বা পুনর্বিবেচনার আবেদন।
রিভিউ শুনানিতে নিজস্ব রায়ের ত্রুটি বা আইনি ভুল দেখিয়ে পুনরায় শুনানির আবেদন জানাতে পারেন দণ্ডিত ব্যক্তি।
এর একটি নজির আছে—জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার পর রিভিউতে খালাস পেয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার সুযোগ
রিভিউয়েও দণ্ড বহাল থাকলে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন।
রাষ্ট্রপতি চাইলে:দণ্ড মওকুফ,দণ্ড হ্রাস,অথবা দণ্ড স্থগিত করতে পারেন।
জাতীয় নিরাপত্তাজনিত বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনায় এই ক্ষমা প্রয়োগ করা হয়।
সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ: এখন কী হবে
ট্রাইব্যুনাল রায়ে শেখ হাসিনা ও কামালের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত-আহত পরিবারের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বণ্টনের নির্দেশ দিয়েছে।
সরকার এখন এনবিআর বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা দিয়ে সম্পত্তির তালিকা তৈরি, বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়া পরিচালনা ও বণ্টনের ব্যবস্থা করবে।
শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া
ভারত থেকে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার বিবৃতিতে রায়কে “পক্ষপাতদুষ্ট”, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” ও “প্রহসন” বলে মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনা। তার ভাষ্য—অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করা।
