সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

| ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মানবতাবিরোধী অপরাধে কামালের মৃত্যুদণ্ড;

মুক্তিযোদ্ধা থেকে সংসদ সদস্য-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫:৪৫, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

মুক্তিযোদ্ধা থেকে সংসদ সদস্য-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে ছয়টি অংশ ছিল। টানা আড়াই ঘন্টা রায় পড়া শেষে এই রায় ঘোষণা করা হয়। 

বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে ওয়ারেন্ট জারি আছে। তাদের অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করা হয়।  

কে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকার ব্যস্ত নগরীর তেজগাঁওয়ের মনিপুরীপাড়া। সেখানেই ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নেন এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে আসাদুজ্জামান খান কামাল। পরিবারে ছিল শিক্ষার সুর, মূল্যবোধের দৃঢ়তা ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার শিক্ষা। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন একটু আলাদা—নির্ভীক, সোজাসাপ্টা, সিদ্ধান্তে দৃঢ়।

স্কুলজীবন কাটে তেজগাঁও পলিটেকনিক হাই স্কুলে। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করার পর তিনি চলে আসেন জগন্নাথ কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশ তখন উত্তাল। ছাত্রসমাজ অধিকার ও স্বাধীনতার প্রশ্নে জেগে উঠছে। এই সময়ে তিনি শুধু পড়াশোনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; রাজনীতি-সচেতন তরুণ হিসেবে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এখান থেকেই তার রাজনৈতিক বোধ ও নেতৃত্বের ভিত্তি তৈরি হতে থাকে।

এরপর আসে ১৯৭১। তিনি অস্ত্র হাতে নেমে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ২ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরীর অধীনে যুদ্ধ করেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এই সময়ের অভিজ্ঞতা তাকে পরবর্তী জীবনে গড়ে তোলে দৃঢ়, কঠোর সিদ্ধান্তের মানুষ হিসেবে।

স্বাধীনতার পরে তিনি ধীরে ধীরে সংগঠনিক রাজনীতিতে গুরুত্ব পেতে থাকেন। তেজগাঁও, রমনা, দোহার—এই তিন অঞ্চলে তিনি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নকে তিনি নিজের দায়িত্ব মনে করতেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন—যা ছিল তার রাজনীতির বড় প্ল্যাটফর্ম।

সংসদ সদস্য থেকে মন্ত্রী 

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ঢাকা-১১ আসন থেকে। সংসদে প্রবেশের পর তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে দায়িত্ব পান। তার কাজের ধীর-স্থিরতা, দলীয় আনুগত্য, এবং প্রশাসনিক দক্ষতা তাঁকে দলের উচ্চপর্যায়ের আস্থাভাজন করে তোলে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন—এবার ঢাকা-১২ আসন থেকে। নির্বাচনের কয়েকদিন পরই তিনি পান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব: ১২ জানুয়ারি ২০১৪ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তার কড়া মনোভাব আলোচনার জন্ম দেয়। তিনি ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অন্যতম দৃশ্যমান মুখ হয়ে ওঠেন।

অবশেষে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই আসে তার রাজনৈতিক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। দক্ষতা, আনুগত্য ও প্রশাসনিক কঠোরতার জন্য তিনি পূর্ণাঙ্গ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময়ের মন্ত্রিত্ব—একটানা দায়িত্ব পালন করেন, যা সচরাচর বাংলাদেশে দেখা যায় না।

মন্ত্রী হিসেবে তার সময়টা ছিল আলোচিত, সমালোচিত এবং বহু ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভরা। জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান, বড় বড় নিরাপত্তা ইস্যু সামলানো—সবই তার মূল ভূমিকার অংশ ছিল। একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধীদের চোখে তিনি হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রক্ষমতার কঠোর মুখ।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সম্পদের পাহাড় গড়া, অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ—এসব অভিযোগও ওঠে। ২০২৪–২০২৫ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি দেশত্যাগ করেন—যা আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

বর্তমানে তিনি ভারতে আছেন। তার মন্ত্রিত্ব, ভূমিকা, কঠোরতা, সমালোচনা—সব মিলিয়ে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির এক আলোচিত ও সমালোচিত প্রভাবশালী চরিত্র।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

শেখ হাসিনার গড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আলোচিত যত রায়
হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলল সরকার
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বললেন শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডে কষ্ট পেয়েছেন আইনজীবী
খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনী বদলে দিয়েছে ভূয়াছড়ি পার্বত্যবাসীর জীবনমান
সাবেক আইজিপি মামুনের যাবজ্জীবন চান হতাহতের পরিবার
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ’ বললেন আসিফ নজরুল
গ্রেপ্তারের দিন থেকেই হাসিনা-কামালের সাজা কার্যকর: অ্যাটর্নি জেনারেল
আপিলের জন্য আত্মসমর্পন করতে হবে শেখ হাসিনাকে
মানবতাবিরোধী অপরাধে কামালের মৃত্যুদণ্ড; মুক্তিযোদ্ধা থেকে সংসদ সদস্য-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন, আল্লা জীবন দিয়েছেন, আল্লাই নেবেন: অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে ‘মাইলফলক’ মন্তব্য সালাহউদ্দিনের
মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড; ছাত্রলীগ নেত্রী থেকে চার মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী
নবাবগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি উদ্বোধন
সৌদির হোটেল কক্ষে দীঘিকে হাতে লেখা চিরকুট
হাসিনাকে খুঁজতে হারানো বিজ্ঞপ্তির মাইকিং
শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বিএনপির অবস্থান
বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে ‘আতঙ্কিত নই’—সৈয়দা রিজওয়ানা
শেখ হাসিনার রায়; মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ সতর্কতা, বাড়তি তল্লাশি
ঢাকা–খুলনা মহাসড়ক অবরোধে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ