সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

| ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড;

ছাত্রলীগ নেত্রী থেকে ৫ বারের প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫:৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

ছাত্রলীগ নেত্রী থেকে ৫ বারের প্রধানমন্ত্রী

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা / ফাইল ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে ছয়টি অংশ রয়েছে।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে টানা দেড় দশক দেশ শাসন করেছেন শেখ হাসিনা। ১৫ মাস আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশে ছেড়ে ভারতে যান তিনি। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রথম সাবেক সরকারপ্রধান, যাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল। 

এমনকি শেখ হাসিনা এমন এক ট্রাইব্যুনালে এই সাজা পেলেন, যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য। এই ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।

রাজনীতির শুরু ছাত্রজীবনে

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু ছাত্রজীবনে, যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে সক্রিয় হন। রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা আরও গভীর হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও পারিবারিক পরিবেশ তাঁর রাজনীতিবোধকে শৈশব থেকেই প্রভাবিত করে।

শৈশবে রাজনীতির অভিজ্ঞতা

‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, কিভাবে ঘরের ভেতরেই রাজনীতির পরিবেশ তাকে আকৃষ্ট করত। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের সময় বাড়িতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং চলা, নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক জনসভায় পিতার বক্তব্য—সবই তার রাজনৈতিক চেতনার ভিত গড়ে দেয়।

জেল-জুলুম ও দীর্ঘ নির্বাসনের পথ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় ট্র্যাজেডিতে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহসান ও পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হলে বিদেশে অবস্থান করায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। এরপর তিনি ৬ বছর ভারতসহ বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকতে বাধ্য হন।

১৯৮১ সালে অনুপস্থিতিতে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। একই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন।

বারবার আটক, গৃহবন্দি ও অন্তরীণ

১৯৮৩: আটক, ১৫ দিন অন্তরীণ।

১৯৮৪: দু’বার গৃহবন্দি।

১৯৮৫: তিন মাসের বেশি গৃহবন্দি।

১৯৮৭: গ্রেফতার ও এক মাস অন্তরীণ।

১৯৮৯, ১৯৯০: পুনরায় গ্রেফতার/গৃহবন্দি।

২০০৭: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আবারও কারাবন্দি।

তার ওপর ১৯ বার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে আওয়ামী লীগ দাবি করে থাকে।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও প্রধানমন্ত্রিত্ব

শেখ হাসিনা চারবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন— ১৯৯৬–২০০১, ২০০৯–২০১৪, ২০১৪–২০১৮, ২০১৯–২০২৪ , ২০২৪ (জানুয়ারি-আগস্ট)

২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে তার সরকার ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতিগত ন্যায়বিচারের প্রশ্নে তার শক্ত অবস্থান আলোচিত হয়।

জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ‘জিরো টলারেন্স’

২০০৯–২০১৬ পর্যায়ে বাংলাদেশে একাধিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার সরকার সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর অবস্থান নেয়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তার জিরো টলারেন্স নীতি দেশকে বড় অস্থিরতার হাত থেকে রক্ষা করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন উল্লেখ করেছেন— “শেখ হাসিনা সাহসী না হলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হতো না।”

ব্যক্তিগত স্মৃতি ও শেষ জীবনের প্রত্যাশা

১৯৮৬ সালে সাপ্তাহিক রোববার-এ প্রকাশিত লেখায় তিনি পিতার কাছ থেকে পাওয়া মানবিক টান ও গ্রামের প্রতি অনুরাগের কথা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন—“আমার জীবনের শেষ দিনগুলো আমি টুঙ্গিপাড়ায় কাটাতে চাই। নদীর ধারে একটা ঘর করতে চাই। বাবা-মায়ের কথা স্মৃতিচারণ করে লিখতে চাই।”

২০২৫–এর প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল্যায়নে সমর্থকরা বলেন—শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা কাঠামো নির্মাণে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকারী নেতা।

আর সমালোচকরা বলেন—দীর্ঘ ক্ষমতাকাল তাকে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ঠেলে দেয়।

ইতিহাস শেষ পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে, তা সময়ই বলে দেবে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

শেখ হাসিনার গড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আলোচিত যত রায়
হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলল সরকার
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বললেন শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডে কষ্ট পেয়েছেন আইনজীবী
খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনী বদলে দিয়েছে ভূয়াছড়ি পার্বত্যবাসীর জীবনমান
সাবেক আইজিপি মামুনের যাবজ্জীবন চান হতাহতের পরিবার
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ’ বললেন আসিফ নজরুল
গ্রেপ্তারের দিন থেকেই হাসিনা-কামালের সাজা কার্যকর: অ্যাটর্নি জেনারেল
আপিলের জন্য আত্মসমর্পন করতে হবে শেখ হাসিনাকে
মানবতাবিরোধী অপরাধে কামালের মৃত্যুদণ্ড; মুক্তিযোদ্ধা থেকে সংসদ সদস্য-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন, আল্লা জীবন দিয়েছেন, আল্লাই নেবেন: অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে ‘মাইলফলক’ মন্তব্য সালাহউদ্দিনের
মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড; ছাত্রলীগ নেত্রী থেকে চার মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী
নবাবগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি উদ্বোধন
সৌদির হোটেল কক্ষে দীঘিকে হাতে লেখা চিরকুট
হাসিনাকে খুঁজতে হারানো বিজ্ঞপ্তির মাইকিং
শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বিএনপির অবস্থান
বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে ‘আতঙ্কিত নই’—সৈয়দা রিজওয়ানা
শেখ হাসিনার রায়; মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ সতর্কতা, বাড়তি তল্লাশি
ঢাকা–খুলনা মহাসড়ক অবরোধে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ