সাবেক আইজিপি মামুনের যাবজ্জীবন চান হতাহতের পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:০৮, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:১৭, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে অসন্তুষ্ট নিহতদের স্বজন ও আহতরা। ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণআন্দোলনে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড হলেও অন্য আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায়ে অসন্তুষ্ট নিহতদের স্বজন ও আহতরা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) তিনজন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে পলাতক দেখিয়ে বিচারের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে এজলাসের আসামির কাঠগড়ায় হাজির করে রায় শোনানো হয়।
রায়ের পরে শেখ হাসিনা ও কামালকে ভারত থেকে এনে রায় কার্যকর হওয়া দেখতে চান বলেও জানান আন্দোলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
জুলাই গণআন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে সাবেক আইজিপি মামুনের ন্যূনতম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি জানাচ্ছি। এজন্য ভূক্তভোগী হিসেবে আপিল করবো আমরা’।
ভাইকে হারানো স্নিগ্ধের মত আরও কয়েকটি স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা এদিন রায় শুনতে ট্রাইব্যুনালে আসেন। ট্রাইব্যুনাল চত্বরে তারা সংবাদমাধ্যমের কাছে রায় নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ে জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণআন্দোলন দমনে এক হাজার ৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেগুলোকে তিনটি কাউন্টে দুটি অভিযোগে পরিণত করে রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনাকে সাভারের আশুলিয়া ও ঢাকার চাঁনখারপুলে দুটি গণহত্যার ঘটনায় মোট ১২ জনকে হত্যায় মারণাস্ত্র ব্যবহারের আদেশ দেওয়ার অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড এবং হত্যায় উসকানির দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। আর আসাদুজ্জামান খান কামালকে সাভারের আশুলিয়া ও চাঁনখারপুলে ওই ১২ জনকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ছয়ভাগে বিভক্ত মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিশেষত প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আন্দোলন চলাকালে মানবতাবিরোধী সব ধরনের অপরাধের মাস্টারমাইন্ড (পরিকল্পনাকারী), হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছেন প্রসিকিউশন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। তবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে সব অপরাধ প্রমাণিত হলেও তিনি রাজসাক্ষ্য দেওয়ায় তাকে কম সাজা অর্থাৎ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এই আসামি সর্বোচ্চ সাজার যোগ্য হলেও মামলা প্রমাণে সহায়তা করায় অনুকম্পা পেয়েছেন।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু অপরাধের ব্যাপকতা এবং যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেসব অপরাধ তিনি করেছেন সেগুলোর জন্য তিনি সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য। কিন্তু, যেহেতু তিনি এই মামলাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য সাহায্য করেছেন সে বিষয় বিবেচনায় তিনি ন্যুনতম সাজা পাবেন।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে আরও বলেন, তিনি সব এট্রোসিটিজের জন্য দায়ী। কিন্তু ঘটনার বিবরণ পূর্ণাঙ্গভাবে ডিসক্লোজ করেছেন তিনি। এসব বিষয় বিবেচনায় সাবেক এই আইজিপিকে ট্রাইব্যুনাল পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের এই রায় প্রত্যাখ্যান করেন মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তার ন্যূনতম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি তোলেন তিনি। পাশাপাশি সরকারের প্রতি সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় এনে তাদের শাস্তির দাবি জানান স্নিগ্ধ।
