সাজা হলে শেখ হাসিনা- কামালের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৪৮, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
শেখ হাসিনা ও আসাুজ্জামান খান কামাল
জুলাই গণআন্দোলনে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাজা হলে তাদেরকে গ্রেপ্তারে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির আবেদন জানানো হবে। বর্তমানে ভারতে ‘পলাতক’ দুই আসামিকে ফেরাতে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের কথাও জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।
রাজসাক্ষী হয়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করা এই মামলার অন্য আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১২টা ৩৫ মিনিট থেকে তিনজন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলাটির রায় দিচ্ছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
তিন আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণআন্দোলন দমনে এক হাজার ৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনা হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আগেই আবেদন জানিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। প্রসিকিউশন জানিয়েছেন, রায়ে যদি ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে সাজা দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির
আরেকটি ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন জানানো হবে। একই আবেদন জানানো হবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে।
রোববারের (১৬ নভেম্বর) ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার আরও জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সাজা হলে তারা আপিলও করতে পারবেন না। এর কারণ, তারা পলাতক। ট্রাইব্যুনাল আইনে পরিষ্কার বলা আছে, রায় দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। তবে আপিলের সুযোগ নিতে হলে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে হয়। অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি গ্রেপ্তার করতে পারে, তাহলেও আপিলের সুযোগ পান আসামি।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধি) জামিনের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, কিশোর, বালক ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে সাধারণ আইনেও আলাদা কোনো প্রিভিলেজ (অগ্রাধিকার) দেওয়া হয় না। ট্রাইব্যুনাল আইনেও আলাদা কোনো প্রিভিলেজ নেই। অতএব রায়ের ক্ষেত্রে আসামি নারী হোক, পুরুষ হোক, তিনি তার অবস্থানে থেকে কী অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের গ্র্যাভিটি (গুরুত্ব) বিবেচনা করে শাস্তি দেওয়া হবে। আর মামলা প্রমাণিত না হলে আসামিকে খালাস দেওয়া হবে।
ভারতে বসে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন- প্রশ্নে গাজী মোনাওয়ার বলেন, ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে শেখ হাসিনা সব কথা বলতে পারবেন। হাজির না হয়ে তিনি যেসব কথা বলবেন, সেটি আইনের দৃষ্টিতে কোনো বক্তব্যই নয়। তার ভয়েস রেকর্ড (কণ্ঠস্বর) বাজিয়ে শোনানো হয়েছে উন্মুক্ত ট্রাইব্যুনালে, যা সম্প্রচারিত হয়েছে। সেখানে শোনা গেছে, শেখ হাসিনা নিজ মুখে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন কথোপকথনের মাধ্যমে। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যতো মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, কেউই স্বীকার করেননি যে, তারা অপরাধী।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে সরকারের ও কূটনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছে প্রসিকিউশন। এটিকে (শেখ হাসিনার বক্তব্যকে) আমলে নিচ্ছেন না প্রসিকিউশন। শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
