উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ
বিধ্বস্ত গাজায় কিশোরীর বাধভাঙা উচ্ছ্বাস
মাইসারা জান্নাত
প্রকাশ: ০৮:৪০, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছেন ইমান লুলু। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি
গাজায় অব্যাহত ইসরায়লি হামলায় ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য স্কুল, বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজারো পরিবার। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দুই বছর পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন অনেকেই। আশানুরূপা ভালো ফলাফল করায় পরিবারের লোকদের সাথে বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বিধ্বস্ত গাজার কিশোরী ইমান লুলু।

ইমান লুলু। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি
গাজার বিষণ্ণ আকাশের নিচে হঠাৎ যেন আনন্দের জোয়ার বয়ছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা, অবিরাম হামলা, ভেঙে পড়া স্কুল এবং বারবার স্থানচ্যুত হওয়ার যন্ত্রণার মধ্যেও সে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল অদম্য মনোবল নিয়ে। এখন তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
গাজার মানুষ প্রতিদিন যেখানে মৃত্যুর হিসাব রাখে, সেখানে ইমান লুলুর সাফল্য যেন নতুন জীবনের ঘোষণা করছে। পরিবারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তার উদযাপনের ছবি সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রচণ্ড সাহসের।

মা-বাবার সঙ্গে ইমান লুলু। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি
চারদিকে ধ্বংসের চিহ্ন, দেয়াল নেই, জানালা নেই, শৈশবের মাঠও আর নেই। তবু ছোট এই ঘরে হাসির ঢেউ। ইমানের মা তাকে বুকে টেনে নেয়। বাবা অবিশ্বাস মেশানো আনন্দে তাকিয়ে থাকেন মেয়ের দিকে। এমন এক সময়ে তাদের ঘরে এভাবে আনন্দ ফিরে আসা সত্যিই বিস্ময়কর।
গত দুই বছরে গাজার শিক্ষাজগৎ পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। অসংখ্য স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। পরিবারগুলো নিরাপত্তার খোঁজে বারবার জায়গা বদল করেছে। ইমানের বইপত্র বহুবার হারিয়ে গেছে। কখনো তাঁবুর আলোয়, কখনো ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে সে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। বইয়ের পাতায় জমে থাকা ধুলো ঝেড়ে নতুন করে শুরু করেছে বারবার। ওর মতো হাজারো শিক্ষার্থী একই পরিস্থিতির মুখোমুখি। তারা জানত না আদৌ পরীক্ষায় বসতে পারবে কি না। তবুও হাল ছাড়েনি কেউ।
যুদ্ধবিরতির পর পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। তখনও হামলা চলছিল। তাই প্রতিদিনই ছিল অনিশ্চয়তার ভয়। কখনও সাইরেনের শব্দে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের ঠিকানা ছিল না। কিন্তু ইমান ঠাণ্ডা মাথায় নিজের লক্ষ্য আঁকড়ে রেখেছিল। সে বিশ্বাস করত জ্ঞানই তাকে টিকিয়ে রাখবে।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইমান লুলু। ছবি: আনদোলু এজেন্সি
ইমান স্বপ্ন দেখে চিকিৎসক হওয়ার। সে গাজার আহত মানুষদের সেবা করতে চায়। যেসব শিশু আগুনে দগ্ধ হয়েছে, যাদের শরীর যুদ্ধের ক্ষতচিহ্নে ভরা, তাদের পাশে দাঁড়াতে চায়। তার চোখে শুধু নিজের ভবিষ্যৎ নয়, পুরো অঞ্চলের আরোগ্যের আকাঙ্ক্ষা।
ধ্বংসের শহর গাজায় ইমান লুলুর এই ছোট্ট সাফল্য নিছক আনন্দের ঘটনা নয়। এটি দৃঢ়তার গল্প, স্বপ্নের গল্প। যুদ্ধ সবকিছু নিতে পারে, কিন্তু মানুষের প্রত্যয় কেড়ে নিতে পারে না। গাজার প্রতিটি শিশুর কণ্ঠে আজ এই কথাই প্রতিধ্বনিত, তারা পড়তে চায়, এগিয়ে যেতে চায়।
ইমানের হাসি অন্ধকার গাজায় এক আলোকবিন্দুর মতো। এই আলোই তাদের আগামীর পথ দেখাবে।
