দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন–ককটেল হামলা, মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১২, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা প্রথম মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রবিবার (১৬ নভেম্বর) দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়েছে। সিলেট, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া ও ঢাকার সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে সাতটি বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।
রাত ৯টার দিকে সেন্ট্রাল রোডে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাসার সামনে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর বাংলামোটর, শ্যামপুর, গাবতলী ও মহাখালীর আমতলা এলাকায় একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। শ্যামপুরে বিস্ফোরণে মেহেদী নামে এক ব্যক্তি আহত হন।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। ক্ষয়ক্ষতি না হলেও আতঙ্ক তৈরি হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিউ ইস্কাটনে ওয়াক্ফ ভবনের সামনে ককটেল হামলায় আবদুল বাসির (৫০) নামের এক পথচারী আহত হন।
শনিবার রাতেও গাজীপুরের শ্রীপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখায় তিনটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে সাইনবোর্ডের কিছু অংশ পুড়ে যায়। রবিবার টঙ্গীতেও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
রায়ের আগের দিন ভোরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মাদারীপুরের গোপালপুর এলাকায় গাছ কেটে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে। তিন ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গাছ সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, রায়কে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ যাতে আরও নাশকতা চালাতে না পারে, সে জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার রাত ১০টা পর্যন্ত আগুন দেওয়া সাতটি যানবাহনের মধ্যে সিলেটে একটি বাস ও একটি অ্যাম্বুলেন্স, সাভারে দুটি বাস, ময়মনসিংহে একটি কাভার্ড ভ্যান, কুষ্টিয়ায় একটি ট্রাক এবং ঢাকার হাজারীবাগে একটি বাস অন্তর্ভুক্ত। গত এক সপ্তাহে দেশে মোট ৩৬টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে আগুনে এক চালক মারা গেছেন।
রবিবার ভোরে ফেনীর জুলাই স্মৃতিস্তম্ভেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন এসব নাশকতা চালাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সোমবারের রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই—পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।
অনলাইনে ‘সর্বাত্মক শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও মাদারীপুর ছাড়া দেশের অন্য কোথাও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তেমন কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা দেখা যায়নি।
ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে ‘একটি মহল’ দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
এদিকে জামায়াতসহ সমমনা আট দল রবিবার ঘোষণা দিয়েছে, সোমবার তারা মাঠে থাকবে এবং নাশকতা প্রতিহত করবে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা কোনো অস্থিতিশীলতা হতে দেবেন না।
