সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

| ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

শেখ হাসিনার মামলার রায় আজ

যেভাবে আসামি থেকে রাজসাক্ষী হলেন মামুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:৫৪, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

যেভাবে আসামি থেকে রাজসাক্ষী হলেন মামুন

সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ফাইল ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

তিনি আদালতকে বলেছেন, ‘যে কোনো মূল্যে’ আন্দোলন দমানোর নির্দেশ তিনি পেয়েছিলেন সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে এ মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ সোমবার। 

তিন আসামির মধ্যে একমাত্র মামুনই কারাগারে আটক আছেন। বাকি দুজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

যেভাবে রাজসাক্ষী হলেন মামুন

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গত ১০ জুলাই এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়।
‘পলাতক’ হাসিনা ও কামালের অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

সাবেক আইজিপি মামুন মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে কোনো আবেদন করেননি। তার বদলে তিনি দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।

অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় মামুনকে অভিযোগ পড়ে শোনায় ট্রাইব্যুনাল। বিচারক জানতে চান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের দায় তিনি স্বীকার করেন কি না?

জবাবে মামুন বলেন, তিনি দোষ স্বীকার করছেন। আর অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে তথ্য দিয়ে তিনি ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করবেন।

ট্রাইব্যুনাল তার রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে।

মামুন যেহেতু দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন, সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে আলাদা রাখার আবেদন করেন তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। আদালত সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক আছেন। তৃতীয় আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সাহেব আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় অভিযোগ বিষয়ে তার বক্তব্য কী। তিনি তার দোষ স্বীকার করেছেন।”

ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি আরও বলেন, “তিনি (আবদুল্লাহ আল-মামুন) বলেছেন, তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে এই যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে হয়েছিল, সেই অপরাধের সবকিছু যেহেতু তার জানবার কথা; সেহেতু সমস্ত তথ্য তিনি আদালতকে উদঘাটনের ব্যাপারে সহ্যায়তার মাধ্যমে তিনি অ্যাপ্রুভার হতে চেয়েছেন। তার প্রার্থনা আদালত মঞ্জুর করেছেন। তিনি সাক্ষী হিসেব গণ্য হবেন। বাংলায় এটাকে বললে রাজসাক্ষী। কিন্তু আইনে যেটাকে বলা হয়েছে–অ্যাপ্রুভার।”

রাজসাক্ষী হলে মামুনকে ক্ষমা করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, “তার বক্তব্যের মাধ্যমে পুরোপুরি সত্য প্রকাশিত হলে আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন অথবা অন্য কোনো আদেশও দিতে পারেন।”

জবানবন্দিতে কী বলেছেন মামুন

জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার মামলায় ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) প্রথম জবানবন্দি দেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

এরপর ১২ জুলাই ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাজসাক্ষী হিসেবে গত ৩ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন মামুন।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে ফোন করে বলেন যে, আন্দোলন দমনে সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তখন তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে ছিলেন এবং তার সামনে ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার। পরে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের এই নির্দেশনা তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ সারাদেশে পৌঁছে দেন প্রলয় কুমার। সেদিন থেকেই মারণাস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়।

মামুন বলেন, এই মারণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে ‘অতি উৎসাহী’ ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর ও ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। এক্ষেত্রে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশ ছিল, ‘যে কোনো মূল্যে’ আন্দোলন দমন করতে হবে।

সাবেক আইজিপি তার জবানবন্দিতে বলেন, শেখ হাসিনাকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে ‘প্ররোচিত করতেন’ ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমাতে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার বিষয়ে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল ‘সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’। যার পরামর্শ দিয়েছিলেন র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ।

আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লক রেইড দিয়ে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করা হয়। আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন দমনে সরকারকে ‘উৎসাহিত করেন’ বলে মামুনের ভাষ্য।

‘কোর কমিটি’র বৈঠকের বিষয়ে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় ‘কোর কমিটি’র বৈঠক হত। সব বৈঠকেই আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হত। একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়।

সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই থেকে এ প্রস্তাব আসার কথা তুলে ধরে মামুন বলেন, তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘নির্দেশে’ পরে রাজি হন। আর সমন্বয়কদের আটকের দায়িত্ব ডিএমপির তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুনকে দেওয়া হয়।

জবানিতে সাবেক আইজিপি আরও বলেন,“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিজিএফআই ও ডিবি তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে। সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয় এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের ডিবিতে এনে চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়।”

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকাল ১১টায় গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটির বৈঠক সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল-মামুন।

তিনি বলেন, ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, এসবির প্রধান, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এনএসআইয়ের প্রধানের সঙ্গে তিনিসহ মোট ২৭ জন উপস্থিত ছিলেন। জুলাই আন্দোলন দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরছিল। কিন্তু চারদিকে পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বৈঠকটি মুলতবি করা হয়।

তবে ওইদিন রাতে গণভবনে আবারও বৈঠক ডাকা হয়। মামুন বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ রেহানা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাবের মহাপরিচালক ও সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমানসহ তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধান ও এসবির প্রধান বাইরে অপেক্ষমান ছিলেন।

ওই বৈঠকে ৫ অগাস্ট আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে।

ওই বৈঠক থেকে সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুমে যাওয়ার কথা জানিয়ে জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সেখানে (কন্ট্রোল রুম) তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাবের মহাপরিচালক, ডিজিএফআই প্রধান, এসবি প্রধান ও মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঢাকা শহরের প্রবেশমুখে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং ৪ অগাস্ট রাত সাড়ে ১২টায় সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুম থেকে তারা সবাই চলে যান।

আন্দোলনের দিনগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে মামুন বলেন, “২৭ জুলাই আন্দোলন চলাকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আমরা নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের পরিস্থিতি দেখতে যাই। পথে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আমরা কিছুক্ষণ অবস্থান করি।”

তিনি আরও বলেন, “ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইলে একটি ভিডিও দেখান ওয়ারী জোনের ডিসি ইকবাল। ভিডিও দেখিয়ে ইকবাল বলেন যে, ‘গুলি করি, একজন মরে। সেই যায়। বাকিরা যায় না।’ পরবর্তীতে এই ভিডিও সারাদেশে ভাইরাল হয়।”

২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাব মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন মামুন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, র্যাব সদর দপ্তর পরিচালিত উত্তরাসহ র্যাব-১ এর কার্যালয়ের ভেতরে টিএফআই সেল (টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিল। র্যাবের অন্যান্য ইউনিটের অধীনেও অনেক বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী এবং সরকারের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের আটকে রাখা হত, যা একটা ‘কালচারে’ পরিণত হয়েছিল।

তার ভাষ্য, অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন এবং ‘ক্রসফায়ারের’ নামে হত্যার মত কাজগুলো র্যাবের এডিজি (অপারেশন) এবং র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকরা সমন্বয় করতেন। আর র্যাবের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো ‘সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে’ আসত।

এই নির্দেশনাগুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের মাধ্যমে আসার কথা ‘জেনেছিলেন’ বলেও জবানবন্দিতে দাবি করেন সাবেক আইজিপি।

সেসব নির্দেশনা ‘চেইন অব কমান্ড’ ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপারেশন) ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকদের কাছে পাঠানো হত বলেও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের দাবি।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তিনি যখন আইজিপির দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তাকে ব্যারিস্টার আরমানের (যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম আরমান) আটক থাকার বিষয়টি জানানো হয়।

মামুন বলেন, “র্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন। তাকে (আরমান) তুলে আনা এবং গোপনে আটক রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের ছিল।

তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে বলেন, ‘ঠিক আছে, রাখেন। পরে বলব।’ কিন্তু পরে আর কিছু তিনি জানাননি। এরপর আমি কয়েকবার বিষয়টি তুলেছিলাম, কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।”

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারের আদেশে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে মন্তব্য করে জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, “আমি পুলিশ প্রধান হিসেবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। জুলাই আন্দোলনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার জন্য আমি অপরাধবোধ ও বিবেকের তাড়নায় রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সাবেক আইজিপি বলেন, “পরবর্তী সময়ে আমি ট্রাইব্যুনালে স্বজন হারানোদের কান্না, আকুতি ও আহাজারি দেখেছি। ভিডিওতে নৃশংসতা দেখে অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত আমি যৌক্তিক মনে করছি।”

তিনি বলেন, “বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের পর আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মত বীভৎসতা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে আমার দায়িত্বশীল সময়ে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

তিনি এমনও বলেন, “এর দায় আমি স্বীকার করছি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। আমি প্রত্যেক নিহতদের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন। আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াৎ (বাঁচিয়ে রাখেন) দান করেন, বাকি জীবনে কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।”

রাজসাক্ষী হওয়ায় মামুনের কি সাজা হবে?

জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে প্রসিকিউশন।

এ মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন ইতোমধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, “তারা মনে করেন, সাবেক আইজিপি মামুন তার জবানবন্দিতে ঘটনা সম্পর্কে সত্য প্রকাশ করেছেন। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ট্রাইব্যুনাল।”

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

শেখ রেহানাসহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি গ্রহণ
ঢাকায় একাধিক স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ
খুলনায় নানি ও দুই নাতি-নাতনির মরদেহ উদ্ধার
উপদেষ্টা রিজওয়ানার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
কাপ্তাই সড়কে সিএনজির উপর হাতির হামলা, প্রাণ গেল বৃদ্ধার
স্টারবাকস বয়কটের ডাক মেয়র জোহরান মামদানির
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১১, নিখোঁজ ১২
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া ফ্যাসিবাদ হটানো সম্ভব নয়—জোনায়েদ সাকি
পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল, ১৫ কর্মকর্তার বদলি
সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭০০
যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কড়াকড়ি
ট্রেনের লাগেজ ভ্যান কেনায় ৩৫৮ কোটি টাকার ক্ষতি, রেলের ছয় কর্মকর্তা দুদকের মামলার মুখোমুখি
ট্রেনের লাগেজ ভ্যান কেনায় ৩৫৮ কোটি টাকার ক্ষতি, রেলের ছয় কর্মকর্তা দুদকের মামলার মুখোমুখি
মোহাম্মদপুরে ৬ পেট্রল বোমা উদ্ধার, আটক ১
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন প্রেম চোপড়া
লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে নতুন বিতর্কে কঙ্গনা রানাউত
বিভিন্ন দেশের ১৫ হাজার প্রবাসীকে ফেরত পাঠালো সৌদি আরব
১০ বছর পর বড় পর্দায় ফিরছেন বজরঙ্গি ভাইজানের ‘মুন্নি’
চুড়ান্ত নিবন্ধন দৌঁড়ে এগিয়ে এনসিপি ও বাসদ, পিছিয়ে আমজনগণ পার্টি
গাজা পরিকল্পনা নিয়ে জাতিসংঘে ভোট সোমবার