ওয়াশিংটন–কারাকাস দ্বন্দ্বে যুদ্ধের শঙ্কা
ট্রাম্পকে মাদুরোর কড়া সতর্কবার্তা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:৩০, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৭:১৯, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন সামরিক কার্যক্রম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় লাতিন আমেরিকার ভূরাজনীতি আবারও অস্বাভাবিক উত্তেজনা তৈরি করেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই অঞ্চলটিতে মার্কিন নৌবাহিনীর চলাচল, যুদ্ধজাহাজের টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ছিল। কিন্তু শুক্রবার পরিস্থিতি আরও পর্যায়ক্রমে বিস্ফোরক হয়ে ওঠে, যখন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন—“আফগানিস্তান, লিবিয়া কিংবা ইরাক—আর কোনও চিরস্থায়ী যুদ্ধ চাই না। শান্তিই বাঁচুক।”
সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারের পর মিরাফ্লোরেস প্রাসাদের সামনে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণে মাদুরোর কণ্ঠ ছিল আরও কঠোর ও ক্ষুব্ধ। তিনি দাবি করেন, ওয়াশিংটন ইচ্ছে করেই ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে এবং ভেনেজুয়েলাকে টার্গেট করছে।
মাদুরোর ভাষায়—“এ অঞ্চলটিকে আরেকটি ফরএভার ওয়ার-এর দিকে ঠেলে দেওয়া হলে লাতিন জনগণ প্রতিরোধ করবে। অন্যায্য যুদ্ধের খেলা আর চলবে না।”
মার্কিন প্রতিরক্ষার পাল্টা ঘোষণা: ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’
মাদুরোর মন্তব্যের ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই উত্তেজনা দ্বিগুণ হয়ে যায়, যখন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ ঘোষণা করেন নতুন সামরিক মিশন—‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’।
হেগসেথ দাবি করেন, এই অভিযান “আমেরিকার মাতৃভূমিকে সুরক্ষিত রাখা” এবং “নারকো-সন্ত্রাসীদের উত্থান প্রতিরোধের অংশ”।
কিন্তু বিতর্ক এখানেই—ভেনেজুয়েলা না কোকেন উৎপাদনকারী দেশ, না ফেন্টানিলের ট্রানজিট হাব। ফলে বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট বলছেন, “ড্রাগ ওয়ার” যুক্তির আড়ালে geopolitical চাপ প্রয়োগই মূল উদ্দেশ্য।
গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার জলসীমায় সন্দেহভাজন নৌযানে সরাসরি প্রাণঘাতী হামলাও চালিয়েছে—যা কারাকাস আরও ক্ষুব্ধ করেছে।
ভেনেজুয়েলার হুঁশিয়ারি: ‘সাহস থাকলে আসুন’
ওয়াশিংটনের এই নতুন কৌশলের জবাবে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান হিল একেবারে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন—
“সাহস থাকলে আসুন। আমরা প্রস্তুত আছি।”
রয়টার্স জানিয়েছে, সম্ভাব্য মার্কিন হামলার মুখে কারাকাস দুটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে—
১) গেরিলা–ধাঁচের প্রতিরোধ ব্যবস্থা
দেশজুড়ে ২৮০টিরও বেশি স্থানে ছোট, বিচ্ছিন্ন ইউনিট মোতায়েন
দ্রুত আঘাত ও নাশকতা চালাতে সক্ষম বাহিনী
আক্রমণ ঘটলে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ নির্মাণের কৌশল
২) ‘অ্যানার্কাইজেশন’ প্ল্যান
রাজধানী কারাকাসকে বিভ্রান্ত ও অচল করতে বিশেষ গোয়েন্দা-সংযুক্ত দল
শত্রুপক্ষ বাহিনী ঢুকলেও শাসন কঠিন করে ফেলা
শহরব্যাপী অস্থিতিশীলতা তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা
ক্যারিবিয়ানে USS Gerald R. Ford—যুদ্ধজাহাজের আগমন বাড়াল আতঙ্ক
পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী USS Gerald R. Ford-এর ক্যারিবিয়ান সাগরে আগমন।
১৯৮৯ সালের পানামা অভিযান–পরবর্তী সময়ের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বলে আন্তর্জাতিক মহলের অভিমত।
লাতিন বিশ্লেষকরা বলছেন, “এ ধরনের মোতায়েন স্পষ্টতই সংঘর্ষের ইঙ্গিত বহন করছে। ডিপ্লোম্যাটিক চাপ নয়—এটি সামরিক চাপ প্রয়োগের প্রস্তুতি।”
