হেবরনে ইব্রাহিমি মসজিদে মুসলিম প্রবেশ বন্ধ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:০১, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে ঐতিহাসিক ইব্রাহিমি মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে ঐতিহাসিক ইব্রাহিমি মসজিদ মুসলিম উপাসনার জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে হেবরনের পুরোনো শহরজুড়ে আরোপ করা হয়েছে কড়া কারফিউ, যার কারণে শত শত ফিলিস্তিনি স্বাভাবিক যাতায়াত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শনিবার গভীর রাতে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।
স্থানীয় কর্মী ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অবৈধ ইসরায়েলি বসতকারীদের ধর্মীয় উৎসব পালনের সুবিধার্থে ইব্রাহিমি মসজিদ মুসলিমদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হেবরন ডিফেন্স কমিটির সদস্য আরেফ জাবের জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই পুরোনো শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলমান কারফিউ আরও কঠোরভাবে কার্যকর করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি বাহিনী শহরের প্রবেশ ও বেরোনোর সকল পথ বন্ধ করে দেয়—এর ফলে বহু ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরে ফিরতে না পেরে স্বজনদের বাড়িতে রাত কাটাতে বাধ্য হন।
আরেফ জাবের আরও জানান, শুক্রবার রাত ও শনিবার সকাল দুই দফায় শত শত অবৈধ বসতকারী ভারী সামরিক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পুরোনো শহরে প্রবেশ করে এবং রাস্তাজুড়ে উসকানিমূলক শোভাযাত্রা পরিচালনা করে। এ পরিস্থিতি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন,“এই কারফিউ আসলে ইব্রাহিমি মসজিদের বাকি অংশ সম্পূর্ণ দখলে নেওয়ার এবং সেটিকে সিনাগগে রূপান্তর করার বৃহত্তর ইসরায়েলি পরিকল্পনার অংশ।”
হেবরনের পুরোনো শহরে অবস্থিত ইব্রাহিমি মসজিদ বর্তমানে পুরোপুরি ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে। ১৯৯৪ সালে এক ইহুদি বসতকারী মসজিদে গুলি চালিয়ে ২৯ জন ফিলিস্তিনি মুসল্লিকে হত্যা করলে ইসরায়েল মসজিদটিকে দুই ভাগে ভাগ করে:৬৩% অংশ ইহুদিদের উপাসনার জন্য,৩৭% অংশ মুসলিমদের জন্য।
এছাড়া মসজিদের আজান দেওয়ার ঘরটিও ইহুদিদের বরাদ্দ অংশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিনই ইব্রাহিমি মসজিদের সুক গেট ও পূর্ব দিকের প্রধান প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত পূর্ণ প্রবেশাধিকার আর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
ভারী সামরিক উপস্থিতি, পথ বন্ধ, এবং সময়ে সময়ে বসতকারীদের শোভাযাত্রার কারণে পুরোনো শহরের দৈনন্দিন জীবন কার্যত অচল। বহু পরিবার নিজেদের ঘরে ফিরতে না পেরে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান দখল নীতিরই অংশ, যার উদ্দেশ্য পুরোনো হেবরনে মুসলিম উপস্থিতি আরও সংকুচিত করা।
