পুতিনের নির্দেশেই স্ক্রিপালকে হত্যাচেষ্টা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:০৫, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপাল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুমোদনে করা রাসায়নিক হামলার ৭ বছর পর প্রথমবারের মতো নিজেদের ওপর হওয়া হত্যাচেষ্টার ভয়াবহ বর্ণনা প্রকাশ করলেন সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপাল। ২০১৮ সালের ৪ মার্চ সালিসবুরিতে ‘নভিচক’ নার্ভ এজেন্টে বিষপ্রয়োগে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছেছিলেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬–কে তথ্য সরবরাহকারী এই দ্বৈত এজেন্ট ও তার মেয়ে।
ডেইলি মেইলের এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, স্ক্রিপালের বাড়ির দরজার হাতলে ছড়ানো হয়েছিল সোভিয়েত আমলে তৈরি প্রাণঘাতী ‘নভিচক’। প্রয়োগের পর মুহূর্তেই তাদের দৃষ্টিবিভ্রাট, শ্বাসকষ্ট, বিভ্রম ও বমি শুরু হয়। তিন সপ্তাহ তারা ছিলেন গভীর কোমায়।
রাশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পরদিন বাবা-মেয়ে লাঞ্চ করার সময় হঠাৎ দু’জনের চোখ কাঁপতে থাকে। তারা প্রথমে বিষয়টি ‘মজার’ ভেবেছিলেন। কিন্তু মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়—শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, প্রচণ্ড বিভ্রম ও দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।
ইউলিয়া বলেন—“রাস্তার সবকিছু দুলছিল। বাবার হাত ধরেই হাঁটছিলাম। কিছু দূর গিয়ে আর হাঁটা যাচ্ছিল না। সাইন্সবারির কার পার্কের কাছে একটি বেঞ্চে বসতেই চারদিকে রং বদলাতে থাকে—গোলাপি, নীল, লাল। যেন এলএসডি নিয়েছি!”
মিনিটের মধ্যেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পথচারীরা সাহায্য না করলে নিজের বমিতে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হতো বলে ধারণা করেন তিনি।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ইউলিয়া বাবার কাঁধে হেলে আছেন, আর সের্গেই স্ক্রিপাল বিভ্রমে ‘আরবি নারী-পুরুষ’ দেখছেন—যা তিনি বুঝেছিলেন বিভ্রম, কারণ সালিসবুরিতে আরবি জনগোষ্ঠী নেই বললেই চলে।
স্ক্রিপাল বলেন—“দুই পাশে আরবি নারী-পুরুষ দেখছিলাম। একজনকে ঘুষিও মেরেছিলাম। জানতাম এগুলো বিভ্রম।”
২১ দিন পরে কোমা থেকে জেগে উঠে তিনি ভেবেছিলেন মাত্র একদিন কেটেছে।
ঘটনার পর ব্রিটিশ কাউন্টার টেরর পুলিশ ও ১৮০ জন রাসায়নিক যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ তদন্তে যুক্ত হন। তদন্তের নাম রাখা হয় ‘ডন স্টার্জেস ইনকোয়ারি’—৪৪ বছর বয়সী ডন স্টার্জেস পরিত্যক্ত সুগন্ধির বোতল ভেবে নভিচক শরীরে স্প্রে করে মারা যান।
পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত গবেষণাগারে তৈরি সামরিক পর্যায়ের নার্ভ এজেন্ট।
ব্রিটিশ পুলিশ নিশ্চিত করে, ভুয়া নাম আলেকজান্ডার পেত্রভ ও রুসলান বশিরভ ব্যবহার করে দুই রুশ এজেন্ট যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন। পরে জানা যায় তাদের প্রকৃত পরিচয়—ইভান এরমাকভ,আলেক্সেই লুগোভ।
তারা দাবি করেছিলেন, সালিসবুরির ‘খ্যাতিমান ১২৩ মিটার উঁচু ক্যাথেড্রাল দেখতে’ এসেছিলেন—এই দাবি নিয়ে তখন বিশ্বজুড়ে তীব্র উপহাস হয়েছিল।
ব্রিটিশ সরকার জানায়—২০১৩ সাল থেকে স্ক্রিপালদের নড়াচড়া নজরদারির জন্য ইউলিয়ার ইমেইল ভুয়া ‘এক্স-এজেন্ট ম্যালওয়্যার’ দিয়ে হ্যাক করছিল রুশ গোয়েন্দারা।
২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে দুই এজেন্ট এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায়ও রয়েছে।
২০১৮ সালের সালিসবুরি হামলার পূর্ণ তদন্তের চূড়ান্ত রায় আগামী মাসে প্রকাশ করা হবে। আন্তর্জাতিক মহলে আশা করা হচ্ছে, এতে রুশ রাষ্ট্রীয় সম্পৃক্ততা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া স্পষ্ট করে তুলে ধরা হবে।
