২৬ বাংলাদেশিকে নিয়ে লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবি, ৪ জনের মৃত্যু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯:২৯, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
লিবিয়ার উপকূলে দু’টি নৌকাডুবি। ছবি : সংগৃহীত
উত্তর আফ্রিকার লিবিয়ার উপকূলে দুইটি অভিবাসী নৌকাডুবির ঘটনায় কমপক্ষে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। একই উপকূলে পৃথক ঘটনায় আরও অর্ধশতাধিক সুদানিসহ অন্য অভিবাসীরা নৌকাডুবির শিকার হলেও কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আল-খোমস উপকূল এই দুর্ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আল-খোমসের উপকূলে প্রায় ১০০ জনকে বহনকারী দুটি নৌকা বিপর্যস্ত হয়েছে। লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে জানা যায়, প্রথম নৌকাটিতে ছিলেন বাংলাদেশের ২৬ নাগরিক। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
দ্বিতীয় নৌকাটিতে ছিলেন ৬৯ জন অভিবাসী। এদের মধ্যে দুজন মিসরীয় এবং বাকি ৬৭ জন সুদানি। সুদানিদের মধ্যে অন্তত আটজন শিশু ছিলেন। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, উদ্ধারকারীরা জীবিতদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি মৃতদের মরদেহ উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা ও সহায়তা প্রদান করে।
লিবিয়া বর্তমানে ইউরোপগামী অভিবাসীদের জন্য একটি জনপ্রিয়, তবে বিপজ্জনক ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ২০১১ সালে দেশটির নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে লিবিয়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের জন্য মূল যাত্রাপথ হয়ে উঠেছে। গাদ্দাফির শাসনামলে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় বৈধ কাজের সুযোগ থাকলেও, তাঁর পতনের পর দেশটি প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়াদের সংঘাতের কারণে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট বলছে, লিবিয়ায় শরণার্থী ও অভিবাসীরা নিয়মিতভাবে নির্যাতন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরঞ্জাম ও অর্থসহায়তা দিয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত মিলিশিয়ারা নিজেই অভিবাসীদের উপর নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকে।
এ ছাড়া মানবাধিকার সংগঠনগুলো উল্লেখ করছে, ইউরোপের কিছু দেশ সমুদ্রপথে রাষ্ট্রীয় উদ্ধার অভিযান ধাপে ধাপে বন্ধ করায় অভিবাসীদের জন্য যাত্রা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত দাতব্য সংস্থাগুলোও বিভিন্ন রাষ্ট্রের দমনমূলক পদক্ষেপের মুখোমুখি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, লিবিয়ায় অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও জীবন-সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে, এই ধরনের নৌকাডুবি এবং প্রাণহানির ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতেই থাকবে।
