ভারত–পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৮:৩৮, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
ভারত-পাকিস্তানের পতাকা। ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি একবারে উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলতি মাসের শুরুতে দিল্লির লালকেল্লার কাছে এক গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। পরের দিন ইসলামাবাদের একটি আদালত কমপ্লেক্সের কাছে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এই পরপর বিস্ফোরণ ভারত ও পাকিস্তান—উভয় দেশকে সতর্ক অবস্থায় নিয়ে এসেছে। সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং উভয় দেশের সরকারই পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
দিল্লির বিস্ফোরণ ঘটেছে এমন সময়, যখন ভারতের কাশ্মীর সীমান্তে তল্লাশি অভিযান চলছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা একটি আন্তরাজ্য ও আন্তদেশীয় সন্ত্রাসী সেলের হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছে। এই সেল জেইএম এবং আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দের (এজিইউএইচ)-এর সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। পাকিস্তানভিত্তিক জেইএম-এর হামলার ইতিহাস ভারতের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। এজিইউএইচ হলো আল-কায়েদা অনুপ্রাণিত কাশ্মীরি সশস্ত্র সংগঠন।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP) আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানে হামলার পরিকল্পনা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের দাবি, ভারত এই গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে হামলার জন্য লজিস্টিক সমর্থন দিচ্ছে। তবে ভারত এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিস্ফোরণকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের কেউ রেহাই পাবেন না, সবাইকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। মোদি আরও বলেছেন, “আমরা কখনও সন্ত্রাসকে ক্ষমা করব না। ভারত তার জনগণ ও দেশের সুরক্ষার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও বিস্ফোরণকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের’ অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “দুটি বিস্ফোরণই ভারতের নৃশংস ষড়যন্ত্রের নিদর্শন। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবসময় জোরদার পদক্ষেপ নেবে।” শাহবাজ আরও মন্তব্য করেছেন যে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সশস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এ ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটতে দেবে না।
সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার হয়েছে। ভারত সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে এবং নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। পাকিস্তানও সমানভাবে সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম ও সীমান্ত পর্যবেক্ষণ বাড়িয়েছে। উভয় দেশের পারমাণবিক সক্ষমতা এই উত্তেজনাকে সবসময়ই জীবিত রাখছে।
দুই দেশের সাধারণ মানুষও নিরাপত্তা ও শান্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক উসকানি, গণমাধ্যমে সংবেদনশীল প্রতিবেদন এবং পারস্পরিক অভিযোগ পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুই দেশকে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা এবং সন্ত্রাসবাদের ঘটনার সমন্বিতভাবে মোকাবিলা না করা হলে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
দিল্লি ও ইসলামাবাদের বিস্ফোরণ দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। দুই দেশের সরকারের সতর্কতা, সংযম ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সঠিক কৌশল, কূটনৈতিক সংলাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
[তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা, রয়টার্স, ডন, সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, ব্রুকিংস ইনডাউমেন্ট এবং কার্নেগি এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস]
