কাদের সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজিরা দিলেন লতিফ সিদ্দিকী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:২০, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
কাদের সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজিরা দিলেন লতিফ সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীত
উচ্চ আদালতের জামিনে কারামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ঢাকার শাহবাগ থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর আদালতপাড়ায় তার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লতিফ সিদ্দিকী আদালতপাড়ায় পৌঁছান তার ছোট ভাই, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে। দুজনকে দেখে উপস্থিত আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ নীরবে পথ করে দেন। আদালত কক্ষে প্রবেশের সময় বয়স ও অসুস্থতার কারণে তার শারীরিক দুর্বলতা স্পষ্ট ছিল।
এদিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও শাহবাগ থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক হাসান প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। এ বিষয়ে প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই জিন্নাত আলী আদালতকে জানান যে কিছু প্রয়োজনীয় নথিপত্র এখনও সংগ্রহাধীন।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালত তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য নতুন তারিখ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেন।
৮৬ বছর বয়সী লতিফ সিদ্দিকী এদিন সরাসরি হাজিরা না দিয়ে তার আইনজীবী রেজাউল করিম হিরণের মাধ্যমে হাজিরার আবেদন করেন। শুনানিতে হিরণ বলেন, “তার বয়স ৮৬ বছর। নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন। আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেওয়ার যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। আদালত আবেদনটি বিবেচনায় নিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।”
শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে লতিফ সিদ্দিকীকে আর সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হবে না। আইনজীবীর ব্যাখ্যায়, এটি তার স্বাস্থ্যের অবস্থার প্রতি আদালতের মানবিক বিবেচনা।
শুনানি শেষে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে লতিফ সিদ্দিকী ও কাদের সিদ্দিকী আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
গত ২৮ আগস্ট ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে ‘মব’ হামলার শিকার হন লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্না এবং আরও কয়েকজন অংশগ্রহণকারী। হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৬ জনকে হেফাজতে নেয়।
পরদিন তাদের বিরুদ্ধেই শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। মামলায় ‘রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা’ এবং ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র’—এসব অভিযোগ আনা হয়।
এফআইআর অনুযায়ী, ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠন ৫ আগস্ট আত্মপ্রকাশের পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ‘বিকৃতি’ প্রতিহত করার লক্ষ্যে ২৮ আগস্ট গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
মামলায় বলা হয়, “সভা চলাকালে একদল ব্যক্তি স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে, কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করে এবং দরজা বন্ধ করে অংশগ্রহণকারীদের অবরুদ্ধ রাখে।”
পুলিশ পরে ১৬ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকী ছাড়া বাকি ১৫ জন বিভিন্ন বয়সী রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এছাড়া পরবর্তীতে সাবেক দুই সচিব—ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও আবু আলম শহীদ খান—এ মামলায় গ্রেপ্তার হন।
ম্যাজিস্ট্রেট ও জজ আদালত আগে তাদের জামিন আবেদন নাকচ করেন। পরে তারা হাই কোর্টে আবেদন করলে গত ৬ নভেম্বর বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের বেঞ্চ লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
রাষ্ট্রপক্ষ জামিন বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করলেও ১০ নভেম্বর তা বহাল থাকে।
১২ নভেম্বর কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান লতিফ সিদ্দিকী।
