শেখ হাসিনার রায় কাল: বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঘোষণা করা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়। দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় পড়বেন। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। পাশাপাশি একটি বিদেশি বার্তাসংস্থা ট্রাইব্যুনালে লাইভ সম্প্রচারের অনুমতি চেয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি—জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও মারণাস্ত্রের ব্যবহার সংক্রান্ত পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
গত ১৩ নভেম্বর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,“আমরা আদালতের কাছে সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আবেদন করেছি। আদালত সুবিবেচনা প্রয়োগ করবেন, তবে এ অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম বিবিধ মামলা দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর প্রথম শুনানিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। পরে ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও একই মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রসিকিউশন মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
এর মধ্যে—২,০১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র,৪,০০৫ পৃষ্ঠা জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণ,২,৭২৪ পৃষ্ঠা শহীদদের তালিকা
১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়। এরপর ১০ জুলাই তিন আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট ছিল সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের দোষ স্বীকার করে সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে রাজসাক্ষী হতে আবেদন। ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করলে তিনি সাক্ষ্য দেন এবং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আদালতে তুলে ধরেন।
২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি চান।পরে চিফ প্রসিকিউটরও একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তিন আসামির খালাস দাবি করেন।
মামলার পাঁচটি অভিযোগ
১. ১৪ জুলাই হত্যাযজ্ঞ ও ‘রাজাকারের বাচ্চা’ মন্তব্য
গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী কর্মীদের হামলায় দেড় হাজার মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হয়—এ অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
২. হেলিকপ্টার–ড্রোন–মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মাকসুদ কামাল ও সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথোপকথনের অডিওর ভিত্তিতে অভিযোগ—শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের নির্মূলের জন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তা বাস্তবায়ন করেন।
৩. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে হত্যা
রংপুরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন আসামির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।
৪. চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর চানখাঁরপুলে নিরস্ত্র ছয় আন্দোলনকারীকে হত্যার ঘটনায়ও তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পোড়ানো
আশুলিয়ার হত্যাকাণ্ডেও একই তিনজনকে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির আওতায় দায়ী করেন তদন্তকারীরা।
