২৬ খণ্ড লাশ: প্রেম-বন্ধুত্বের জটিলতায় হত্যার তথ্য জানাল র্যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৫, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে নীল রঙের দুটি ড্রামে পাওয়া রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ খণ্ড লাশ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র্যাব। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।
এর আগে আশরাফুল হত্যাকাণ্ডে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও ডিবি। তদন্তের শুরুতেই বেরিয়ে আসে রোমহর্ষক তথ্য—হত্যার পর লাশ একই ঘরে রেখে রাত কাটান জরেজুল ও শামীমা।
পরে লাশ গোপন করতে চাপাতি ও দুটি ড্রাম সংগ্রহ করে তারা। পরদিন লাশ ২৬ খণ্ডে ভাগ করে দুটি ড্রামে ভরে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে ফেলে আসে দু’জন।
লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানান, শামীমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনির আখড়া এলাকা থেকে আশরাফুলের পায়জামা, পাঞ্জাবি, রক্তমাখা দড়ি, চাপাতি, ভিডিও এবং ছবি—অসহিষ্ণু হত্যাকাণ্ডের বহু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের দাবি—হত্যার নেপথ্যে পরকীয়া, ব্ল্যাকমেইলিং অথবা পূর্বশত্রুতাসহ একাধিক কারণ থাকতে পারে। মূল উদ্দেশ্য জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যার পর অটোরিকশাযোগে সায়েদাবাদের দিকে যায় জরেজুল ও শামীমা। এরপর জরেজুল শামীমাকে কুমিল্লায় পালিয়ে যেতে বলেন এবং নিজে রংপুরে চলে যাবেন বলে জানান।
পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার রাত ১০টায় কুমিল্লা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
জানা গেছে, রংপুরের একই এলাকায় থাকার সুবাদে আশরাফুল ও জরেজুলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। জরেজুলের মাধ্যমেই পরিচয় হয় শামীমা আক্তারের সাথে, পরে আশরাফুল ও শামীমার মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ঢাকার দক্ষিণ ধনিয়ায় জরেজুল ভাড়া নেওয়া বাসায় শামীমারও ওঠা—তিনজনের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ও পারস্পরিক উত্তেজনা থেকেই সংঘাত তৈরি হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই উত্তেজনার চরম মুহূর্তে ক্ষিপ্ত হয়ে আশরাফুলকে হত্যা করেন জরেজুল। ঘটনাস্থলে শামীমার উপস্থিতির কথাও নিশ্চিত করেছে র্যাব।
লাশ শনাক্ত ও পরিচয়
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহের গেটের কাছে দুটি ড্রামে পাওয়া যায় ২৬ টুকরা লাশ। আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে পরে পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশ।
নিহত আশরাফুল হক রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার ১০ বছরের একটি মেয়ে ও সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তার বাবার নাম মো. আবদুর রশীদ।
