ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া ফ্যাসিবাদ হটানো সম্ভব নয়—জোনায়েদ সাকি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২:৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। ছবি: সংগৃহিত
মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন—“ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে ফ্যাসিস্টদের বিতাড়ন করা সম্ভব হবে না; শুধুই স্থাপনা ভেঙে বা শব্দচিৎকার করে ফ্যাসিবাদ দূর হবে না।” তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় নিতে হলে ন্যায়বিচারই হতে হবে ভিত্তি।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণসংহতি আন্দোলন–জিএসএ আয়োজিত “মওলানা ভাসানী ও গণঅভ্যুত্থানের রাজনীতি: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ” শীর্ষক এই আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
সভাপতির বক্তব্যে সাকি বলেন:মওলানা ভাসানী স্বাধীনতা, স্বাধিকার, আত্মমর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শ্রমিক, কৃষক, শ্রমজীবী, তরুণ-তরুণী, নারী ও বিভিন্ন লিঙ্গপরিচয়ের মানুষ যে লড়াই করেছেন, তাদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করাই হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের রাজনীতি।
ন্যায়বিচারের অভাবে ৭২-এর রাষ্ট্রকাঠামো দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়, যার পরিণতিতে বহুবার অভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদী শাসনের উত্থান হয়েছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “ফ্যাসিস্টদের শুধু নামিয়ে দিলে হবে না, ন্যায্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে নিজেরাই আবার জালেমে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”
তিনি আরও বলেন, জামায়াতসহ আট রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবিকে সামনে রেখে যে অবস্থান নিচ্ছে, তা দেশের জন্য সংকট তৈরি করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিচার–সংস্কার–নির্বাচন’ এই তিন-ধাপ উত্তরণের পথ অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন,আইউবশাহীর সময় মওলানা ভাসানী দেখিয়ে গেছেন—স্বৈরশাসন হটাতে গণঅভ্যুত্থান ছাড়া উপায় নেই। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সকল শ্রেণির মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে জনগণ এখন বিকল্প শক্তি খুঁজছে।দুর্নীতি, বৈষম্য ও দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হলে ভাসানীর পথ অনুসরণ ছাড়া উপায় নেই।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন,২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মূল ম্যান্ডেট ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন।শহীদ আবু সাঈদের আত্মদান মানুষকে রাস্তায় নামতে উদ্বুদ্ধ করেছে।তিনি অভিযোগ করেন, সরকার নিরপেক্ষ আচরণ করছে না।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম বলেন,সত্তরের নির্বাচনের পর এবারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে।তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে নির্বাচনের আগে নেতৃত্বের অবস্থানে দেখা যাচ্ছে না—যা নতুন ট্রাজেডির ইঙ্গিত দেয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন,দেশে নৈরাজ্য চলছে, নগরগুলো বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।আসন্ন নির্বাচনে দায়বদ্ধ সংসদ গঠন ও শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলাই ন্যূনতম চাহিদা।
মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন,মওলানা ভাসানীর লক্ষ্য ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।কিন্তু দেশে বারবার ফ্যাসিবাদী শাসনের উদ্ভব হয়েছে; টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা জরুরি।জেএসডি’র তানিয়া রব: ‘রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়া জরুরি’ জানিয়ে বলেন,সালমান এফ রহমানসহ অনেকের গ্রেপ্তার হচ্ছে, কিন্তু সমাজ সচেতনতার ঘাটতি রয়ে গেছে।
মধ্যবিত্ত সমাজকে পরিকল্পিত রাজনৈতিক পথে আনার ওপর জোর দেন তিনি।
এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন,মওলানা ভাসানীর রাজনীতি আজও মানুষের জীবনে প্রাসঙ্গিক। পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক সাহস ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন।
সভায় আরও বক্তব্য দেন:দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু,বাচ্চু ভুইয়া,দীপক কুমার রায়,আলিফ দেওয়ান,ইখতিয়ার উদ্দিন বিপা,সৈকত আরিফসহ গণসংহতি আন্দোলন ও অন্যান্য দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
