শেখ হাসিনা যে কারণে আপিল করতে পারবেন না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৯, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১০:৫৩, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ঘোষণা হওয়ার কথা। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই গুরুত্বপূর্ণ রায় দেবেন। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার প্রধান আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
আপিলের সুযোগ নেই
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তারা আপিল করতে পারবেন না। ট্রাইব্যুনাল আইনে রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়, তবে এজন্য সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে হবে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হতে হবে।
নারী হিসেবে কোনো বিশেষ সুবিধা নেই
ফৌজদারি কার্যবিধিতে নারী, অসুস্থ, কিশোর বা শিশুদের জন্য কিছু সুবিধা থাকলেও, রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে নারী হিসেবে আলাদা কোনো সুবিধা নেই। ট্রাইব্যুনাল আইনও এ বিষয়ে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা রাখে না।
মাস্টারমাইন্ডের দাবি উপেক্ষা
প্রসিকিউশন দাবি করেছে, শেখ হাসিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি হত্যার নির্দেশ অস্বীকার করেছেন, কিন্তু ট্রাইব্যুনালে হাজির না হয়ে দেওয়া বক্তব্য আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রসিকিউটর বলেন, তার ভয়েস রেকর্ড আদালতে বাজিয়ে শোনানো হয়েছে, যেখানে সে নিজ মুখে ‘মারণাস্ত্র ব্যবহারের’ নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজসাক্ষীর জবানবন্দি
গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকার করেছেন যে, তিনি শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে আন্দোলন দমন করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। তদন্তে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে এই নির্দেশ অনুযায়ী ১,৫০০ নিরীহ ছাত্র ও জনগণকে হত্যা এবং ৩০,০০০ মানুষকে আহত করা হয়েছিল।
মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন প্রসিকিউশন
প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। একই সঙ্গে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবার ও আহতদের মধ্যে হস্তান্তর করার আবেদন করা হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো:
১. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান
২. আন্দোলনকারীদের নির্মূলের জন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার নির্দেশ
৩. রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা
৪. রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা
৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনাল যে রায় দেন না কেন তারা তা মেনে নেবে। রায়ের অংশবিশেষ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শেখ হাসিনাকে শাস্তি দিলে ইন্টারপোলে তার বিরুদ্ধে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্ট’ আবেদন করা হবে।
