শেখ হাসিনা–কামালের খালাস প্রত্যাশা: আমির হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৮, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার ঠিক আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ও টানটান নিরাপত্তার মধ্যেই আশাবাদ ব্যক্ত করলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) মো. আমির হোসেন। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল খালাস পাবেন বলে আমি আশাবাদী। বিচার সুষ্ঠুই হবে বলে মনে করি।”
এদিকে ঢাকাজুড়ে নিরাপত্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের গুরুত্বপূর্ণ রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীতে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠনের পর যে প্রথম মামলাটি (মিসকেস/বিবিধ মামলা) গ্রহণ করা হয়, সেটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। একই বছরের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এবং সেদিনই তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
প্রথমে এই মামলার একমাত্র আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা। পরে ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনের আবেদনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়।
৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ, পাঁচটি আলাদা চার্জ
গত বছরের ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এর মধ্যে—
তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা,জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা ও শহীদদের তালিকার বিবরণ: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা।
এর ভিত্তিতে গত ১ জুন শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় এবং একই দিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেয়। পরে ১০ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়।
আলোচিত এই মামলায় এক পর্যায়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হওয়ার আবেদন করেন এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। তিনি আদালতে বিস্তারিত সাক্ষ্য দেন, যা মামলার গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তাঁর সমাপনী যুক্তিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও একই আবেদন করেন।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন পাল্টা যুক্তিতে বলেন“প্রমাণে গুরুতর ফাঁক–ফোকর রয়েছে। আইনের চোখে তারা খালাস পাওয়ার যোগ্য।"
তার বক্তব্য শেষে ট্রাইব্যুনাল জানায়, রায়ের তারিখ ১৭ নভেম্বর সীমিত আকারে জানানো হবে।
মামলার পাঁচটি অভিযোগ—সংক্ষেপে
১. গণভবনের উসকানিমূলক বক্তব্য ও দেড় হাজার হত্যার অভিযোগ
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। প্রসিকিউশনের দাবি—এই বক্তব্যের প্ররোচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে; আহত হয় প্রায় ২৫ হাজার।
২. হেলিকপ্টার–ড্রোন–মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
অডিও রেকর্ডের সূত্রে অভিযোগ—শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি ভূমিকা রাখেন।
৩. রংপুরে আবু সাঈদ হত্যার অভিযোগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার দায়ে তিনজনকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
৪. চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা
সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনাতেও তিন আসামিকে দায়ী করা হয়েছে।
৫. আশুলিয়ায় পুড়িয়ে হত্যা
আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগও এই মামলার অন্তর্ভুক্ত।
