গাজায় মা ও শিশুর তীব্র খাদ্য সংকট
মাইসারা জান্নাত
প্রকাশ: ২৩:৫৩, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৫৬, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
ইসরা ও মুহাম্মদ দম্পতির পাঁচ সন্তান, বাঁ থেকে তুলীন, কেরাজ, কিফাহ, জুমানা ও জানা। ছবি: আল-জাজিরা
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এক মাস আগে। তবু সাধারণ মানুষের জীবনে তেমন কোনো স্বস্তি ফেরেনি। দেইর আল-বালাহর বাসিন্দা ইসরা আবু রেয়ালা ও তার স্বামী মুহাম্মদের সকাল শুরু হয় খাদ্য খোঁজার লড়াই দিয়ে। পাঁচ সন্তানের এই দম্পতির সবচেয়ে ছোট তিনজন যুদ্ধের সময় একই সঙ্গে জন্মগ্রহণ করে। তারা ট্রিপলেট বেবি।
ইসরা জানান, যুদ্ধ ভয়াবহ ছিল, কিন্তু সবচেয়ে কঠিন ছিল নবজাতক সন্তানদের জন্য খাবার, দুধ এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করা। যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগে জানতে পারেন, তিনি একসঙ্গে তিন সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন।

ইসরা ট্রিপলেট বেবিকে খাবার খাওয়াচ্ছে। কেরাজ, কিফাহ ও জুমানা। ছবি: আল-জাজিরা
ইসরার তিন মেয়ের বয়স এখন ১৯ মাস। তারা ডিম কী, তা জানে না। মুরগির মাংস পেয়েছে কেবল কয়েকবার, তাও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খেতে হয়েছে। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। বাজারে নেই ডিম, মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য, এমনকি শিশুর জন্য জরুরি পুষ্টিকর খাবারও।

ডা. খালিল আল-দেগরান। ছবি: আল-জাজিরা
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা. খালিল আল-দেগরান জানান, মানবিক সহায়তার নামে যে সামান্য পণ্য ঢুকছে, তা প্রকৃত প্রয়োজনের মাত্র এক-চতুর্থাংশও নয়। মূলত অনুমতি মিলছে শুধু চিপস বা নুডলসের মতো অপ্রয়োজনীয় ও অপুষ্টিকর খাদ্যের। তিনি এটিকে স্পষ্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভূক্ত অবস্থায় রাখার নীতি হিসেবে বর্ণনা করেন।
অপর্যাপ্ত খাবারে ইসরার নিজের শরীরও ভেঙে পড়ছে। তিনি পরীক্ষায় জানতে পেরেছেন, অপুষ্টির শুরুর স্তরে আছেন।
যুদ্ধের প্রথম দিকে পরিবারটি নানা আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুরে বেড়িয়েছে। পরে উত্তরের শাতি শরণার্থী শিবির থেকে ট্যাংকের অগ্রযাত্রার কারণে দক্ষিণে ইসরার বাবা-মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। যুদ্ধের তীব্র বোমাবর্ষণের মধ্যেই প্রসববেদনা ওঠে। রাতের আঁধারে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া কঠিন ছিল। বহু চেষ্টার পর তাকে আল-আওদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিজারে তিন কন্যার জন্ম হয়।
জন্মের পরই শুরু হয় নতুন লড়াই। ফর্মুলা দুধ, ডায়াপার, পোশাক, কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিদিন তিন শিশুর জন্য এক কৌটা দুধ লাগত, যা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। অপুষ্টিতে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ইসরা। শিশুদের ক্ষুধার কান্নার শব্দ এখনো তার কানে বাজে।
ডা. দেগরান জানান, গাজায় দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টিতে শিশুদের বিকাশে অপূরণীয় ক্ষতি তৈরি হচ্ছে। এখনই যথেষ্ট খাদ্য ঢুকলেও শরীর ও মস্তিষ্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অনেকের ক্ষেত্রে আর পূরণ হবে না।
ইসরা প্রতিদিন খাবারের একটি টুকরো তিন ভাগ করে তিন শিশুকে দেন। বড় দুই মেয়ে তুলীন ও জানা, তারা নিজেরা না খেয়ে ছোটদের খাওয়ায়, দেখাশোনা করে। পরিবারটির এখন একমাত্র আশা, আবার স্বাভাবিক জীবনের সামান্য ছায়া ফিরে পাওয়া।
ইসরা বলেন, সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক, খাদ্য আসুক, সাহায্য পৌঁছাক। এত কষ্ট, এত ক্ষুধা তারা আর সহ্য করতে পারছেন না।
