মুহাম্মদ ইউনুসের বিবৃতি, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:৫৫, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস। ছবি: পিআইডি
বহুল প্রতীক্ষিত মামলার রায় ঘোষণার পর এক তাৎপর্যপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আদালত আজ এমন এক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রতিধ্বনিত হবে— আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, রাষ্ট্রক্ষমতার পাল্লা যত ভারীই হোক।
আজ সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান তিনি।প্রধান উপদেষ্টা জানান, আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রাণহানির ঘটনায় এই রায় ন্য়ায়বিচারের একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অসম্পূর্ণ ধাপ’।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই রায় জুলাই–আগস্ট ২০২৪–এ নিহত হাজারো মানুষের প্রতি একটি ন্যায়বিচারের বার্তা বহন করে। তাদের পরিবার এখনও ক্ষতির ভার বহন করছে।”
অধ্যাপক ইউনুস বলেন, বহু বছরের দমন-পীড়নে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি ভেঙে গিয়েছিল। এখন নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন, মানুষের ত্যাগ আর ন্যায়ের চেতনার ভিত্তিতে আবার সেই কাঠামো দাঁড় করাতে হবে—
“যারা কেবল কণ্ঠস্বর দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে যে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল—তা শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, রাষ্ট্র ও নাগরিকের মৌলিক বন্ধনকে আঘাত করেছিল।”
তার মতে, এই মামলার বিচার কেবল অতীতের একটি অধ্যায় নয়; বরং ভবিষ্যতের রাষ্ট্রব্যবস্থা কোন ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে, তারও নির্দেশনা।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্দোলনে ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারায়। তারা ছিলেন ‘ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, সাধারণ নাগরিক—অধিকারবোধ ও মর্যাদার জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন।’
তিনি বলেন—“তারা কোনো সংখ্যা নয়। তারা অধিকারপ্রাপ্ত মানুষ—যাদের জীবনের মূল্য রাষ্ট্রকে মানতেই হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আদালতে মাসের পর মাস সাক্ষ্য, ভিডিও ও প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানোর তথ্য উঠে এসেছে, যা জাতীয় বিবেককে আঘাত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, এই রায় আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থান পুনরুদ্ধারের পথ তৈরি করবে। তার ভাষায়—“ছাত্ররা জানত তারা কিসের জন্য লড়ছে। তাদের অনেকেই নিজেদের ‘আজ’ দিয়ে আমাদের ‘আগামীর’ পথ তৈরি করে গেছে।”
বিবৃতির শেষাংশে তিনি বলেন—“আইনি জবাবদিহি যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিশ্বাস পুনর্গঠন। মানুষ কেন জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, তা বুঝতে হবে। তাদের সেই অধিকার ও আশা রক্ষার জন্য কাঠামো তৈরি করাই হবে সত্যিকার অগ্রগতি।”
তিনি আরও যোগ করেন—“বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে এগোতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মানুষের মর্যাদায় স্থির থাকলে আমাদের দেশে ন্যায়বিচার শুধু টিকে থাকবে না—এটি বিকশিতও হবে।”
