মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

| ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

কত সম্পদ শেখ হাসিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬:০৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:১৮, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

কত সম্পদ শেখ হাসিনার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

সোমবার (১৭ নভেম্বর) জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

পাশাপাশি দেশে থাকা তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 
ট্রাইব্যুনালের সম্পদ বাজেয়াপ্ত আদেশের পর সবার মনে স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল জেগেছে যে, এই দুইজনের কি পরিমান সম্পদ দেশে রয়েছে। 

আমরা এই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার সম্পদের তথ্য জানাবো। 

শেখ হাসিনার যত সম্পদ
শেখ হাসিনার সর্বশেষ সম্পদের হিসাব পাওয়া যায় ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে শেখ হাসিনার (গোপালগঞ্জ-৩) ও জমা দেওয়া হলফনামায়। 

সেই হলফনামায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের নামে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য জানান। সেখানে নিজের হাতে নগদ অর্থ ছিল সাড়ে ২৮ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ। ছিল ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ৫৫ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর)।

তখন শেখ হাসিনা হলফনামায় তিনটি মোটরগাড়ি দেখিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি উপহারের। সেটির দাম দেখাননি। বাকি দুটির দাম দেখিয়েছিলেন সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা। সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দাম দেখিয়েছিলেন ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। নিজের আসবাবের দাম ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখিয়েছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনা নিজের নামে থাকা কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৩ বিঘা, যার ক্রয়কৃত অংশের মূল্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ সদর, গাজীপুর ও রংপুরে।

গাজীপুর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে মৌচাকের তেলিরচালা এলাকায় বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘেঁষে রয়েছে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের একটি বাগানবাড়ি ছিল। 

স্থানীয় ভূমি অফিসের তথ্যমতে, ১৯৭০ সালের দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এ জমি লিখে দিয়েছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জমির কিছু অংশ সন্তানদের লিখে দেন। সেই সূত্রে মালিক হন শেখ হাসিনার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ এবং শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক। জমির পরিমাণ ২৯৭ শতক (৯ বিঘা)।

হলফনামা অনুযায়ী, ঢাকার পূর্বাচলে একটি প্লট রয়েছে শেখ হাসিনার নামে, যার দাম ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার নামে এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, ছোট বোন শেখ রেহানা (রেহানা সিদ্দিক), রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (রূপন্তী) নামে পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এই পরিবারের ছয়জন মোট ৬০ কাঠা জমি পেয়েছেন। 

সেই হলফনামায় শেখ হাসিনা তিনতলা ভবনসহ ৬ দশমিক ১০ শতক (আংশিক) জমি নিজের নামে দেখিয়েছেন। এই জমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এর অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

এর আগে শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বলেছে, তারা যাচাই করে দেখতে পায়, ওই সময় শেখ হাসিনার নামে ২৮ একর ৪১ শতকের বেশি স্থাবর সম্পদ ছিল। 

ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটির মালিকানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের হাতে রয়েছে। শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনের মালিকানা রয়েছে সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদের নামে।

সরকারের খোঁজে আরও সম্পদ
এর আগে চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংসহ পাঁচটি দেশ ও কেম্যান আইল্যান্ডস দ্বীপপুঞ্জে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গত ১০ মার্চ রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) ও যৌথ তদন্ত দল অনুসন্ধানে অবৈধভাবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্পদের সন্ধান পেয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, বিএফআইইউ ও যৌথ তদন্ত দলের অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং পশ্চিম ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপ কেম্যান আইল্যান্ডসে শেখ হাসিনার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।  এছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকে রাশিয়ান ‘স্ল্যাশ ফান্ডের’ অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

শফিকুল আলম বলেন, ১২৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ দশমিক ১৪ কোটি টাকা, রাজউকের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা (দলিল মূল্য) মূল্যের ৬০ কাঠা প্লট ও ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ ৮টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, বিএফআইইউ দুটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়েছে।  এছাড়া পাঁচ কোটি ১৫ লাখ টাকাসহ ১১টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে।  সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য দুদকে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এছাড়া প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়। ছয়টি মামলার তদন্ত সম্পাদন ও চার্জশিট দাখিল এবং পরিবারের সাত সদস্যকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

আগেই সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ
গত ১১ মার্চ শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানাসহ তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ,  শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, শেখ রেহানার মেয়ে  টিউলিপ সিদ্দিকের গুলশানের একটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদের সুধা সদন ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।  শেখ রেহানা ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের গাজীপুরের সম্পদ ক্রোকেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতির দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে সেদিন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন।

দুদকের তথ্য বলছে, শেখ হাসিনার ১৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ছয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর বাইরে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, সেন্ট্রাল ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), সূচনা ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, আবু সিদ্দিক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, শাহিন সিদ্দিক, বুশরা সিদ্দিকের একাধিক ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সম্পদ বাজেয়াপ্তের রায়ে কি আছে

সোমবার (১৭ নভেম্বর) শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায়ে বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হলো। এ মামলার জুলাই শহীদদের ‘কনসিডারেবল অ্যামাউন্ট অব কম্পেনসেশন’ (উল্লেখযোগ্য ক্ষতিপূরণ) দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হলো।

আদালত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রায়ের কপি দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

আমজনতার দলসহ ইসির পুনর্বিবেচনায় আরও ৭ দল
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি : ভবিষ্য তহবিল বাধ্যতামূলক
হাসিনা-কামালকে দেশে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাইবে প্রসিকিউশন
স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার মূল্য পুনর্নির্ধারণ
আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না: ড. ইউনূস
বিদেশ থেকে সার-এলএনজি, ইউনিসেফ থেকে ভ্যাকসিন কিনবে সরকার
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের যত সম্পদ
কারাবন্দি আইভীকে আরও ৫ মামলায় গ্রেফতার
১৭০৫০টি শটগান পাচ্ছেন আনসাররা
শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ডেনমার্ক
পাকিস্তানে ঢুকে সন্ত্রাসবাদ খতম করবে ‘ধুরন্ধর’ রণবীর
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কম রাখতে উদ্যোগ: সালেহউদ্দিন
মাত্র ৩৪ বছরে ‘ভয়েস অফ উড়িশা ২’ বিজয়ী হুমানির মৃত্যু
বাংলালিংকের নতুন চিফ মার্কেটিং অফিসার কাজী মাহবুব হাসান
রোহিঙ্গাদের স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করে দেবে সরকার
অপরাধ বাড়ছে না, নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কত সম্পদ শেখ হাসিনার
আদনান আল রাজীবের নতুন বিজ্ঞাপনে শাকিব খান
চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার
ধানমন্ডি ৩২ থেকে এক্সকাভেটর সরিয়ে নেওয়া হলো