সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের যত সম্পদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:২২, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল / ফাইল ছবি
সোমবার (১৭ নভেম্বর) জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পাশাপাশি দেশে থাকা তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের সম্পদ বাজেয়াপ্ত আদেশের পর সবার মনে স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল জেগেছে যে, এই দুইজনের কি পরিমান সম্পদ দেশে রয়েছে।
আমরা এই প্রতিবেদনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দেশে থাকা সম্পদের তথ্য জানাবো।
হলফনামায় কামালের সম্পদ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘোষিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। সেবার তিনি ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
হলফনামায় আসাদুজ্জামান খান হাতে নগদ দেখিয়েছিলেন ৮৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেখান ৮২ লাখ টাকার মতো। বন্ড ও শেয়ার ছিল প্রায় ২৪ লাখ টাকার। ডাকঘর, সঞ্চয়পত্র অথবা স্থায়ী আমানত দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ১ লাখ টাকা।
আসাদুজ্জামান খান দুটি মোটরগাড়ির দাম দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তাঁর ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও আসবাব ছিল ২ লাখ টাকার। তিনি ঋণ বাবদ ব্যবসার মূলধন দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ২০ লাখ টাকার। সোনা দেখান ১০ ভরি, তবে দাম উল্লেখ ছিল না।
হলফনামা অনুযায়ী, আসাদুজ্জামান খানের কৃষিজমির পরিমাণ ১৭১ শতাংশ (৫ বিঘার বেশি), যার অর্জনকালীন মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ টাকা। অকৃষিজমি সাড়ে ১৮ শতাংশ, যার অর্জনকালীন মূল্য সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা। তিনি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের ঘরে দুটি সম্পদের মূল্য দেখিয়েছেন। একটি গ্রামের বাড়ি বলে উল্লেখ করেছেন, যার অর্জনকালীন মূল্য ৮০ লাখ টাকা। অন্যদিকে আরেকটির মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে আসাদুজ্জামান খানের সম্পদের অর্থমূল্য ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো (১০ ভরি সোনার মূল্য বাদে)।
দুদকের খোঁজে আরও সম্পদ
দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) আসাদুজ্জামান খানের সম্পদের অনুসন্ধান করছে। জ্ঞাত আয়ের বাইরেও তার সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদক এ বিষয়ে মামলা করেছে। আদালতে বলা হয়েছে, তিনি অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও দখলে রেখেছেন।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর দুদুক জানায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও তার পরিবারের নামে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে। পাশাপাশি সংস্থাটির অনুসন্ধানে আরও ২০০ কোটি টাকার বেশি মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থার অনুসন্ধান টিম। সব মিলিয়ে আপাতত ৩০০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। ওই দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আসাদুজ্জামান কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, তার ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান, মেয়ে সোফিয়া তাসনিম খান ও সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেনকে আসামি করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুদক আরও জানায়, নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে নামে-বেনামে ১০০ কোটি টাকার বেশি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ব্যাংকের নগদ অর্থ, ঢাকা ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে।
সম্পদ বাজেয়াপ্তের রায়ে কি আছে
সোমবার (১৭ নভেম্বর) শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায়ে বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হলো। এ মামলার জুলাই শহীদদের ‘কনসিডারেবল অ্যামাউন্ট অব কম্পেনসেশন’ (উল্লেখযোগ্য ক্ষতিপূরণ) দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
আদালত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রায়ের কপি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
