শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
হাবীব ইমন
প্রকাশ: ০১:৪৪, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১১:২৮, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দীর্ঘদিনের বিচার প্রক্রিয়ার পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে, এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে।
এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—এই রায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, এবং দলের রাজনৈতিক কৌশল ও নেতৃত্ব কিভাবে নতুন করে সাজানো হবে। শেখ হাসিনা এখনও দলের প্রধান, কিন্তু বিদেশে অবস্থান, আইনি বাধ্যবাধকতা এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা তার কার্যকর উপস্থিতিকে সীমিত করছে।
মাসের পর মাস ধরে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে। আদালত অবমাননার মামলায় সাজা হওয়ার পরও এই অনুরোধ অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সাড়া মেলেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের অবস্থান আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে যদি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বা ভারতে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে ভারতের কাছে তা অতি সংবেদনশীল এক বিষয় হয়ে উঠবে।
রায় ঘোষণার আগে আদালত গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। এর জবাবে আওয়ামী লীগ নিন্দা জানিয়েছে, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে দলটির কার্যক্রমও সীমিত করেছে। এর ফলে, দলটি মূলত রাজনৈতিক ময়দান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। দলের শীর্ষ নেতাদের বড় অংশই নির্বাসনে রয়েছেন—কেউ ভারতে, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, নেতাদের অনুপস্থিতি ও আইনি সীমাবদ্ধতার মধ্যে দলটির কার্যক্রম সীমিত এবং চাপের মুখে রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায়ের পর আওয়ামী লীগের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো—সীমিত সুযোগের মধ্যেই রাজনৈতিক সংহতি বজায় রাখা এবং আগামী নির্বাচনে কৌশলগত উপস্থিতি নিশ্চিত করা। নেতৃত্বের অনুপস্থিতি, বিদেশে অবস্থানরত নেতাদের কর্মকাণ্ড এবং কঠোর আইনি পরিবেশ মিলিয়ে দলটি এক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি।
অপরদিকে, দলটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়াস ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান। দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, নেতৃত্ব নিয়ে কোনো অভ্যন্তরীণ বিতর্ক নেই, এবং শীর্ষ নেতৃত্ব দলকে ভিন্ন কৌশল গ্রহণে প্রস্তুত করছে। এই কৌশল সম্ভবত দুই দিকেই কেন্দ্রিভূত—একদিকে আইনি সীমাবদ্ধতার মধ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে জনগণের কাছে উপস্থিতি বজায় রাখা।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, রায়ের আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রতি চাপ, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তাপ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া—এসব মিলিয়ে আগামী মাসগুলো আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হয়ে উঠতে পারে। দলটির সক্ষমতা ও কৌশল নির্ধারণ করবে, কতটা দ্রুত বা কতটা সফলভাবে তারা রাজনৈতিক ময়দানে ফিরে আসতে পারবে।
সংক্ষেপে, শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড শুধু একজন নেতা বা তার দলের জন্য নয়, সমগ্র রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, নির্বাচনী কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য এক নতুন দিকনির্দেশনা স্থাপন করছে। আগামী নির্বাচনী পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কৌশল, নেতৃত্বের উপস্থিতি এবং রাজনৈতিক সংহতি—এসবই নির্ধারণ করবে দলের ভবিষ্যৎ।
