মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

| ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরোধ চায় সম্মিলিত ছাত্র সংসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮:২২, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:২৩, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরোধ চায় সম্মিলিত ছাত্র সংসদ

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার ‘দোসরদের’ দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরোধ এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত ছাত্র সংসদ। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে এক হাজার একজন শিক্ষক বিবৃতি দিয়েছেন, তাদেরকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও আল্টিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি।   

সম্মিলিত ছাত্র সংসদে অন্তর্ভূক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)।

মঙ্গলবারের (১৮ নভেম্বর) আলাদা আলাদা যৌথ বিবৃতিতে ছাত্র সংসদগুলোর সহ সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদকরা (জিএস) এসব দাবি জানান। 

ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, জাকসুর ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু, রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহিম হোসেন রনি স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ মুক্তিকামী জনগণ ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৮ বছরের দুঃসহ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে। সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশ যখন ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর চিরস্থায়ী বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ তাদের দোসররা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে’।

‘ইতিপূর্বে লগি-বৈঠার তাণ্ডব থেকে শুরু করে দেড় দশক ধরে গুম-খুন, গণহত্যা ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল’ বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রনেতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দুই হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই বিপ্লবের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দেশজুড়ে নাশকতা, চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হলেও সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটনে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয়। চলমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে’।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপতৎপরতা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা। জনগণের জান-মালের হেফাজত এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের শেকড় সমূলে উৎপাটনে সরকারকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জুলাই গণহত্যায় জড়িত সন্ত্রাসীরা এখনো নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এসব আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

সম্মিলিত ছাত্র সংসদের নেতারা বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই দেশদ্রোহী গণহত্যাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়মিত টহল জোরদার করতে হবে এবং দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জাতিকে নিরাপদ করতে হবে। পাশাপাশি জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান উন্নতি জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। 

‘একই সঙ্গে সম্মিলিত ছাত্র সংসদ ডাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসুর পক্ষ থেকে আমরা দল-মত-নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব দেশপ্রেমিক নাগরিক, ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের যে প্রান্তেই এই নিষিদ্ধ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।

অন্যদিকে ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ, জাকসুর জিএস মাজহারুল ইসলাম, রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার এবং চাকসুর জিএস সাইদ বিন হাবিব স্বাক্ষরিত অন্য বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে স্বৈরাচার খুনি শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঐতিহাসিক রায়ের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ সন্তোষ প্রকাশ করছে। এই রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। 

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায় অনুযায়ী, খুনি হাসিনা ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, হেলিকপ্টার ও লেথাল উয়েপন ব্যবহার করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার অধীনস্থদের বাধা না দেওয়ার ফলেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে ও আশুলিয়ায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার মতো ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। এই জঘন্য অপরাধের নির্দেশদাতা হিসেবে খুনি হাসিনাকে যে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) প্রদান করা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে ন্যায়সঙ্গত এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধী শেখ হাসিনার পক্ষে ‘বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকবৃন্দ’ নাম ব্যবহার করে বিবৃতি দেওয়ার সংবাদটি জনগণকে স্তম্ভিত ও বিক্ষুব্ধ করেছে। 

প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, ওই বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০১ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত বলা হলেও বিবৃতির স্বাক্ষরে ৬৫৯ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে। আদালত যাকে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সেই খুনির পক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমন পক্ষ নেওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের প্রতি চরম অবমাননাকর। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী খুনি হাসিনার পক্ষ দেওয়া এই বিবৃতিতে কিছু শিক্ষককে না জানিয়েই তাদের নাম বিবৃতির স্বাক্ষরে যুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকদের চিহ্নিত করার জন্য দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত খুনির পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। 

সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান করে বলা হয়, যে সকল শিক্ষক মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের সকল প্রকার ক্লাস ও পরীক্ষা বয়কট করুন। বিবেকহীন এসব শিক্ষকদের সামাজিক ও একাডেমিক সকল ক্ষেত্র থেকে প্রতিহত করুন। মানবতাবিরোধী অপরাধীর পক্ষ নেওয়া এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিত ছাত্র সংসদ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।


 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

সব অ্যাম্বুলেন্সকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনার দাবি মালিকদের
জুলাইয়ের আবহ ডিসেম্বরে ‘ইকোস অব রেভ্যুলেশন ২.০’ কনসার্ট
নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ১৬২ কাঠা জমিসহ ৫৩ দলিল জব্দ তিন ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ
সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত
নারী ক্রিকেট বিভাগের প্রধান হলেন রুবাবা
অপরাধী হস্তান্তরে চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
১৮ দিনে ডেঙ্গু রোগী ১৭ হাজার ছাড়ালো
এনসিপি ও বাসদ মার্কসবাদীকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন ও স্ত্রী সিতারার ৩৩ ব্যাংক হিসা
আমজনতার দলসহ ইসির পুনর্বিবেচনায় আরও ৭ দল
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি : ভবিষ্য তহবিল বাধ্যতামূলক
হাসিনা-কামালকে দেশে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাইবে প্রসিকিউশন
স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার মূল্য পুনর্নির্ধারণ
আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না: ড. ইউনূস
বিদেশ থেকে সার-এলএনজি, ইউনিসেফ থেকে ভ্যাকসিন কিনবে সরকার
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের যত সম্পদ
কারাবন্দি আইভীকে আরও ৫ মামলায় গ্রেফতার
১৭০৫০টি শটগান পাচ্ছেন আনসাররা
শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ডেনমার্ক
পাকিস্তানে ঢুকে সন্ত্রাসবাদ খতম করবে ‘ধুরন্ধর’ রণবীর