পল্লবীতে যুবদল নেতা হত্যা, বেরিয়ে এলো যেসব তথ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:৪২, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব এবং যুবদলের সক্রিয় নেতা গোলাম কিবরিয়া। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে ভয়াবহ একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব এবং যুবদলের সক্রিয় নেতা গোলাম কিবরিয়াকে প্রকাশ্য গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকারীরা কেবল কিবরিয়াকেই লক্ষ্য করেনি, পালানোর সময় দ্রুত রিকশা না চালানোর কারণে রিকশাচালককেও গুলি করেছে।
ঘটনা সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হেলমেট পরা তিনজন দুর্বৃত্ত পল্লবীর একটি হার্ডওয়্যার দোকানে প্রবেশ করে এবং কিবরিয়াকে মাথা, বুক ও পিঠে লক্ষ্য করে পরপর সাত রাউন্ড গুলি করে। মুহূর্তেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
চিকিৎসা ও নিহতের তথ্য:
গুরুতর আহত অবস্থায় কিবরিয়াকে দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে হাসপাতাল ভেড়েছে যুবদল ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে। তারা দাবি করেছেন, হত্যাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার পেছনে দলীয় কোন্দল নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে, তা তদন্ত শেষে জানা যাবে।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, জনগণের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ব্যবহৃত সাত রাউন্ড গুলির খোসাও উদ্ধার করা হয়েছে।
রিকশাচালকের ওপর হামলা:
কিবরিয়াকে হত্যা করার পর হত্যাকারীরা অটোরিকশায় পালানোর চেষ্টা করলে রিকশা চালক আরিফ (২০) দ্রুত চালাতে না পারায় তাকে গুলি করে আহত করে। পথচারী মো. পিয়ারুল ইসলাম আহত আরিফকে প্রথমে স্থানীয় ইসলামী হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আরিফ জানান, দুজন হেলমেট পরা ব্যক্তি তার রিকশায় উঠে দ্রুত যেতে বলেন; ব্যাটারি চার্জ কম থাকায় তিনি দ্রুত চালাতে পারেননি। এর প্রতিবাদে তারা তার কোমরে গুলি চালিয়ে চলে যায়।
পূর্বসূত্র ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
পুলিশ সূত্র জানায়, কিবরিয়া বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানে বসেছিলেন। তার সঙ্গে পূর্বশত্রুতা বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
নিরাপত্তা ও তদন্ত:
পল্লবী থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান বলেন, জনসাধারণের সহযোগিতায় একজনকে আটক করা হয়েছে এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। যদিও এখনও এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়নি, তবে নিহতের পরিবারের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করছে এবং তদন্ত অব্যাহত।
বিশেষ তথ্য:
হত্যাকারীদের লক্ষ্য ছিল একনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা, যার কারণে এটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিসিটিভি ফুটেজ ও উদ্ধারকৃত গুলি হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ হিসাবে পুলিশি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পল্লবীতে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং দলীয় কোন্দল ইতিমধ্যেই উদ্বেগজনক মাত্রা পৌঁছেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার প্রকৃত কারণ এবং আড়াল আছে কিনা তা তদন্তের পরই স্পষ্ট হবে।
