যে কোর্ট সঠিক ছিলো না, সেই কোর্টের বিচার কি সঠিক?
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৩৭, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। ছবি: সংগৃহিত
জুলাইহত্যার বিচার করার জন্য যেভাবে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। আইন ও একজন মুক্তিযোদ্ধার দৃষ্টি থেকে বলছি। এই ট্রাইব্যুনালে যতো বিচারই হোক না কেন, একদিন না একদিন এই বিচার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যেই আরেকটি বিচারকাজ হয়েছে। ২০০৯ সালে যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন, একাত্তর সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। কেন হয়েছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার?
একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী যখন স্যারেন্ডার করে, সেই ঘোষণাপত্রে লেখা ছিলো-শুধু ৯৩ হাজার সৈন্যের বিচার হবে না, বিচার হবে তাদের যারা সহায়তা করেছিলো-মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, আলবদর, রাজাকার, আলশামসদের সঙ্গে জড়িতদেরও। বিভিন্ন কারণে তখন বিচারটি হয়নি।
মঙ্গলবার বেসরকারি স্যাটেলাইন চ্যানেল এটিএন নিউজের ‘স্বাধীন সাংলাপ’-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছে আরেকটি দেশের সঙ্গে। গোলাগুলি হয়েছে। আমি নিজে পাঞ্জাবিদের বুকে গুলি করেছি। শতশত পাঞ্জাবি মেরেছি। মুক্তিযোদ্ধারা মেরেছেন। পাঞ্জাবিরা এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ মেরেছে। এটা একটা যুদ্ধ ছিলো, রক্তের মহাযুদ্ধ। ওটাই ছিলো আসল যুদ্ধ। জুলাই অথবা ৫ আগস্ট দুই পক্ষে কোনো যুদ্ধ হয়নি। এটা ছিলো একটা গণঅভ্যুত্থান। গণতন্ত্রের জন্য। যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, যারা দেশের ত্রিশ লাখ লোককে হত্যা করতে সাহায্য করেছিলো, দুই লাখ মা- বোনের ইজ্জতের প্রতি অসম্মান করেছিলো, দেশের শতশত বুদ্ধিজীবী-মনির চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, ডা. আলীম চৌধুরীদের হত্যা করে বাঙালি জাতির সর্বনাশ করেছিলো। ওইসব মানুষদের বিচার হয়েছিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের যে কোর্টে হয়েছে, সেখানে জুলাই হত্যার বিচার হতে পারে না। তাদের আরও কঠিন বিচার হোক, অন্য কোর্টে।
ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, মো. তাজুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধীদের ডিফেন্সের ল’ইয়ার ছিলেন। আজ তিনি চিফ প্রসিকিউটর। উনি যখন শপথ নিয়েছেন নিরপেক্ষভাবে সবকিছু করবেন, একজন মানুষ হিসেবে তা সম্ভব নয়। কারণ তিনি যে দলের অভিযুক্তদের ডিফেন্স করেছিলেন, তাদের অনেকেরই মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। তিনি সেই দলের সদস্য। রাজশাহী ইউনিভার্সিটির শিবিরের নেতা ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগ বা ছাত্রমৈত্রীর কেউ যখন হত্যা হয়েছে-আসামি ছিলেন উভয়পক্ষে। তিনি খুনেরও আসামী। প্রসিকিউশনে যারা সাহায্য করেছে তারা সব শিবিরের লোক।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশে গণতন্ত্র এলে এই কোর্টের বিরুদ্ধে রিট হবেই। ক্ষমতায় বিএনপি বা যেই আসুক। সঠিক হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট যখন হবে তখন বলে দেবে এই কোর্ট সঠিক ছিলো না। যে কোর্ট সঠিক ছিলো না, সেই কোর্টের বিচার কি সঠিক? ব্যাপারটা ওই জায়গায় চলে যেতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করি।
তিনি বলেন, দলের কথা আমি সম্মান করি। বিচারের দিকে আমি যাবোই না। এই বিচার কি সঠিক হয়েছে, নাকি বেঠিক করেছে- তা আপিলে গিয়ে প্রমাণিত হবে। কারণ আপিল করার সুযোগ তাদের আছে বলেও তিনি মনে করেন।
