জনবহুল নগরীর তালিকায় শীর্ষে জাকার্তা, দ্বিতীয় ঢাকা

বিশ্বজুড়ে দ্রুত নগরায়নের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে মেগাসিটিগুলোতে। শহরকেন্দ্রিক জীবনের বিস্তার, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং গ্রামের মানুষের শহরমুখী প্রবাহ—সব মিলিয়ে বৈশ্বিক নগর চিত্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের প্রকাশিত সর্বশেষ ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই পরিবর্তনের স্পষ্ট চিত্র, যেখানে আগের তুলনায় বড় ধরনের অদলবদল দেখা গেছে বিশ্বের জনবহুল শহরের তালিকায়।

তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, যেখানে বর্তমানে বসবাস করছে প্রায় ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে এই অবস্থান ধরে রেখেছিল জাপানের টোকিও। উন্নত অবকাঠামো, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং বহু দশকের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে টোকিওর জনসংখ্যা এখনও উচ্চ হলেও জাকার্তার দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে পেছনে ফেলতে পারেনি।

তালিকায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ক্ষেত্রে। আগের তালিকায় নবম স্থানে থাকা ঢাকা এবার উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। সর্বশেষ হিসাবে দেখা যাচ্ছে,, ঢাকায় জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এই বড় ধরনের বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক গবেষকদেরও দৃষ্টি কেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো শহরমুখী মানুষের ক্রমবর্ধমান প্রবাহ। দেশের গ্রামীণ অঞ্চল থেকে মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবনযাপনের আশায় ঢাকায় ছুটে আসে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, পোশাকশিল্প, সেবা খাত এবং ছোট-বড় ব্যবসার ঘনত্ব ঢাকাকে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যেই ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরীতে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ জাকার্তাকে পেছনে ফেলে তালিকার শীর্ষে উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধি যেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে চাঙ্গা করছে, সেখানেই ঢাকার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যানজট, পরিবেশ দূষণ, পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংকটসহ নানা চ্যালেঞ্জ।

অন্যদিকে জাকার্তা অবস্থিত জাভা দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে। ঘনবসতি, বন্যা ঝুঁকি এবং অতিরিক্ত জনচাপে শহরটির অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরেই চাপের মুখে। তবুও কর্মসংস্থানের কেন্দ্রীকরণ এবং সুবিশাল রাজধানী অঞ্চল হিসেবে জাকার্তার আকর্ষণ কমেনি।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে— ভবিষ্যৎ পৃথিবীর বড় অংশই হবে শহরনির্ভর। সেই ভবিষ্যতের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে জাকার্তা ও ঢাকা—দুটি দ্রুত পরিবর্তনশীল মেগাসিটি।